muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

Uncategorized

ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

aus cricket
209681.3
অবশেষে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিল আরেক স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়া। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতকে ৯৫ রানে হারিয়েছে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। ২৯ মার্চ মেলবোর্নে শিরোপা লড়াইয়ে বিশ্বকাপের আরেক স্বাগতিক দেশ নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে অসিরা।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের সামনে ৩২৮ রানের বিশাল লক্ষ দাঁড় করিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথ করেন অনবদ্য এক সেঞ্চুরি। বিশাল রানের নীচে চাপা পড়ে শুরু থেকেই ধুঁকতে শুরু করে ভারতীয়রা। কখনওই ভারতীয়দের মনে হয়নি তারা জয়ের পথে রয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে হারাতে শেষ পর্যন্ত ৪৬.৫ ওভারে ২৩৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো ভারত।

সবচেয়ে বড় কথা, সিডনিতে ভারতীয়দের মনমতো উইকেট বানিয়ে, গ্যালারিকে পুরো ভারতের দখলে দিয়েও আইসিসি পারলো না ভারতকে ফাইনালে তুলে দিতে।

৩২৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছিল ভারত। মিচেল স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন ভারতীয় ওপেনার রোহিতম শর্মা। ক্যাচটি শেন ওয়াটসন তালুবন্দীও করেছিলেন। কিন্তু সেটা ততক্ষণে মাটি ছুঁয়ে ফেলেছিল।

তবুও টিভি আম্পায়ার ম্যারিয়াস এরাসমাস বিভিন্ন কোন থেকে রিপ্লে করে দেখেন এবং শেষ পর্যন্ত নট আউট ঘোষণা করেন। যে কারণে বেঁচে গেলেন ওপেনার রোহিত শর্মা।

এরপর বেঁচে গেলেন অপর ওপেনার শিখর ধাওয়ানও। চতুর্থ ওভারে জস হ্যাজলউডের বলে উইকেটরক্ষক এবং প্রথম স্লিপের মাঝে ক্যাচ উঠে গিয়েছিল ধাওয়ানের। ব্র্যাড হ্যাডিন ডাইভ দিয়েও তালুবন্দী করতে পারলেন না ক্যাচটি। স্লিপে দাঁড়ানো শেন ওয়াটসনও তাই বলটি ধরার চেষ্টা করতে পারলেন না।

দু’দুবার জীবন পেলেন ভারতের দুই ওপেনার। সুতরাং তাদের আর থামায় কে? সত্যি সত্যি থামানো যাচ্ছে না দুই ওপেনারকে। ১০ ওভার শেষে স্কোরকার্ডই তার প্রমান দিচ্ছিল। অবশেষে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানতে সক্ষম হলেন জস হ্যাজলউড। আনলাকি থার্টিনেরই শিকার হলেন ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান।

১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে হ্যাজলউডকে সজোরে খেলতে যান ধাওয়ান। ডিপ এক্সট্রা কভারে ধাওয়ানের ক্যাচটি লুফে নিতে ম্যক্সওয়েলকে মোটেও কষ্ট করতে হলো না।

ইনিংসের প্রথম দিকের অংশটিকে যদি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দাপট বলা হয়, তবে পরের অংশকে বলতেই হবে অসি পেসারদের। শিখর ধাওয়ান আউট হওয়ার পর বিরাট কোহলির কাছেই কিছু রান আশা করেছিল ভারতীয়রা। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে অফফর্মে ছিলেন, ভারতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী ব্যাটসম্যান, সেভাবেই ব্যার্থতার পরিচয় দিয়ে ফিরলেন তিনি। ১৩ বল খেলে ১৬তম ওভারের ৫ম বলে জনসনের বাউন্সারের কাছে ধরা খেয়েই বল তুলে দেন আকাশে। উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হ্যাডিন দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন।

মিচেল জনসন অব্যাহত রয়েছেই। এবার জনসন তোপে বোল্ড হয়ে ফিরলেন রোহিত শর্মাও। ৪৮ বলে ৩৪ রান করে ক্রমেই অস্ট্রেলিয়ার সামনে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন রোহিত। কিন্তু ১৮তম ওভারের শেষ বলে এসে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ভারতীয় ওপেনারকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠালেন মিচেল জনসন।

একা জনসন নন, ভারতের সামনে আজ প্রত্যেকটি অসি বোলারই যেন এক একজন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি। জেমস ফকনার এসে উইকেটে থিতুই হতে দিলেন না বিতর্কিত ব্যাটসম্যান সুরেষ রায়নাকে। ভারতের তার বাড়িতে চলছে বিয়ের প্রস্তুতি। সাজসাজ রব। কিন্তু সেই উৎসবমুখর পরিবেশে যেন পানিই ঢেলে দিলেন ফকনার। ২৩তম ওভারের শেষ বলে বাউন্সার দিলেন ফকনার। ব্যাটের কানায় লাগিয়ে সেই বল রায়না জমা দিলেন ব্র্যাড হ্যাডিনের গ্লাভসে। ১০৮ রানে পড়ল ৪র্থ উইকেট।

205341এরপর কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আজিঙ্কা রাহানে আর মহেন্দ্র সিং ধোনি। এমনকি ৭০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন তারা দু’জন। শেষ পর্যন্ত ৩৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্ক ভাঙেন এই জুটি। তার দারুন ডেলিভারিটি খেলতে গিয়ে ব্যার্থ হন রাহানে। বল গিয়ে জমা হয় হ্যাডিনের গ্লাভসে। আউটের আবেদন করলে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা তাতে সাড়া দেননি। রিভিউর আবেদন করে অসি ক্রিকেটাররা। শেষ পর্যন্ত রিভিউতে দেখা গেলো ব্যাটে লেগেছিল বলটি। সুতরাং আউট। ৬৮ বলে ৪৪ রান করে ফিরলেন রাহানে।

৪১তম ওভারে ধোনির ক্যাচ মিস করলেন মাইকেল ক্লার্ক। জস হ্যাজলউডের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ধোনি। অনেকটুকু দৌড়ে গেলেও ক্যাচটা খুব কঠিন ছিল না। হাতের তালুতে নিয়েছিলেনও বলটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তালুতে জমিয়ে রাখতে পারলেন না ক্লার্ক। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জীবন পেয়ে গেলেন ধোনি।

ধোনি বেঁচে গেলেও স্টিভেন স্মিথের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না রবিন্দ্র জাদেজা। ৪২তম ওভারে মিচেল জনসনের বল থেকে দ্রুত রান নিতে যান ধোনি। কিন্তু স্টিভেন স্মিথের সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভাঙে জাদেজার। ২০৮ রানে ঘটল ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন। জাদেজা আউট হলেন ১৭ বলে ১৬ রান করে।

শেষ পর্যন্ত আউট হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও। ভারতের পক্ষে সেমিফাইনালের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। ৬৫ বলে ৬৫ রান করে মিটি মিটি করে জ্বালাচ্ছিল ভারতের আশার আলো। কিন্তু ৪৪তম তৃতীয় বলে মিচেল স্টার্ক থেকে দ্রুত একটি রান নিতে গিয়ে রানআউট হলেন ধোনি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সরাসরি থ্রো গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। দলীয় রান তখন ২৩১।

ধোনির হারের পরই পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। তবে তাদের পরাজয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার কাজটি করেন জেমস ফকনারই। পর পর দুই বলে তিনি তুলে নিলেন অশ্বিন আর মোহিত শর্মার উইকেট। দু’জনকেই বোল্ড করেন তিনি। সম্ভাবনা তৈরী করেছিলেন হ্যাটট্রিকের। কিন্তু উমেষ যাদব সে সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেন।

Tags: