muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

লাইফ স্টাইল

বৈশাখের সাজ-পোশাক

boishak model

বাংলা বছরের প্রথম দিন বরণ করে নিতে এদেশের মানুষের প্রস্তুতির শেষ নেই। মেয়েরা সাদা শাড়ি-লাল পাড়ে নিজেকে কতটা আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সে প্রস্তুতি শুরু করেছে। পাঞ্জাবিতে নিজেদের ভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলতে ছেলেরাও পিছিয়ে নেই।

এ বছরের বর্ষ বরণে পোশাকের ধরন নিয়ে দেশীয় ফ্যাশন ঘর ‘সাদা-কালো’র কর্ণধার তাহসীনা শাহীন বলেন,

“বৈশাখ হল সাম্প্রদায়িকতা বিহীন একটি উৎসব। এটি বাঙালির একমাত্র প্রাণের উৎসব যেখানে ধর্ম, বর্ণ ভেদাভেদ ছাড়াই সবাই একসঙ্গে জড়ো হয় নতুন একটি বছর বরণ করে নিতে। আর এই দিন বরণ করতে সাদা-লাল রং-ই বেছে নিয়ে থাকে সবাই।”

“প্রতিটি নারীর জন্য শাড়িই হল সব থেকে সুন্দর পোশাক। তবে শাড়ি ছাড়াও এখন অনেকেই ফতুয়া, কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজ বেছে নিচ্ছেন বৈশাখের পোশাক হিসেবে। তাছাড়া সালোয়ার-কামিজ তো আছেই।” বলেন শাহীন।

আর সবার চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশীয় ফ্যাশন ঘরগুলোও সেই অনুযায়ী পোশাকের পসরা সাজিয়েছে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। শুধু নামিদামী ফ্যাশন হাউজগুলোই নয়, ছোটখাটো দোকানগুলোও বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাদের আয়োজন সাজিয়েছেন।

বৈশাখের তীব্র রোদ আর গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্যাশন ঘরগুলো পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। সুতি ছাড়া লিলেন, ক্রেপ জরজেট, সফট জরজেট, হাফ সিল্ক ইত্যাদি কাপড়ও ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে।

শাহীন জানান, এবারের বৈশাখ বরণের পোশাকে সব থেকে বেশি চলছে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টের পোশাক। ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, বাটিক, সাধারণ প্রিন্ট ইত্যাদি প্রিন্টের জনপ্রিয়তা এবার বেশি। তাছাড়া অ্যাপলিক, হাতের কাজ ইত্যাদি তো আছেই।

শাহিন বলেন, “প্রতিবারই বসন্তের সাজের সঙ্গে মাটির গয়না বেশি পরে থাকেন তরুণীরা। তবে আমার এবার মনে হচ্ছে কাপড়ের গয়না এবার বেশি দেখা যেতে পারে। আর সুতার গয়না, ঝুমকা এগুলো তো থাকছেই। তাছাড়া লাল-সাদার পাশাপাশি এবারের বৈশাখে সবুজ, কমলা, হলুদ ইত্যাদি উজ্জ্বল রংও দেখা যাবে।”

নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিনে চাই মনেরমতো সাজ আর মাথায় গোঁজা বেলিফুলের মালা। তীব্র গরম আর ঘামের কথা ভেবে অনেকেই চিন্তিত থাকেন এই দিনের সাজপোশাক নিয়ে। কারণ সাজার পর যদি ঘেমে গিয়ে মেইকআপ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে উৎসবের আনন্দ পুরোটাই মাটি।

তাই এ দিনের সাজ হওয়া চাই হালকা। এ বিষয়ে পরামর্শ দিলেন অ্যারোমা থেরাপিস্ট শিবানী দে।

তিনি বলেন বলেন, “বাংলা নববর্ষ স্বাগত জানাতে প্রাণের এই মেলায় লাল-সাদার প্রাধান্য দিয়ে চলে সাজের পালা। ভিড় জমে ছোট বড় সব শপিং সেন্টারগুলোতেই। পান্তা ইলিশ, লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সবাই নিজেকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে। শাড়ি আর পছন্দের পোশাকের সঙ্গে নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলতে কিছুটা সাজগোজ তো চাই। ”

শিবানী দে জানান, বৈশাখের দিনের এবং সন্ধ্যার মেইকআপ হবে ভিন্ন।

তিনি বলেন, “এ উৎসবের সাজ-পোশাকে থাকে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। সকালে রোদ থাকায় সাজটা হতে হবে স্নিগ্ধ। গাঢ় মেকআপ এ সময় একেবারেই বেমানান। আর গরমের কারণে সাজ হতে হবে ওয়াটার প্রুফ। যাতে ঘামে সাজ নষ্ট না হয়ে যায়।”

দিনের সাজের ক্ষেত্রে হালকা মেইকআপ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন শিবানী দে।

মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাইলে বরফ ঘষে নেওয়া যেতে পারে। এরপর অবশ্যই সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অল্প পরিমাণ ম্যাট ফাউন্ডেশন নিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এর ওপরে সানস্ক্রিনযুক্ত ফেইস পাউডার দিয়ে নিতে হবে, এতে ফাউন্ডেশন ভালোভাবে সেট হবে।

পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মানিয়ে আইশ্যাডো লাগিয়ে নিতে হবে। দিনের সাজে ম্যাট শ্যাডো ব্যবহার করলে ভালো দেখাবে। আর লক্ষ রাখতে হবে যেন শ্যাডোর প্রতিটি শেইড ভালোভাবে ব্লেন্ড হয়ে যায়।

এদিনে কিছুটা টেনে মোটা করে কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন রংয়ের কাজল পেন্সিল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাইলে বিভিন্ন রংয়ের কাজলও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কাজলটি যেন বেমানান না লাগে।

সবশেষে হালকা করে মাসকারা দিয়ে চোখের সাজ শেষ করতে হবে। আর অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ মাসকারা ও আইলাইনার ব্যবহার করতে হবে।

লিপস্টিক লাগানোর আগে প্রথমেই একই রংয়ের লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট সুন্দর করে এঁকে নিয়ে লিপস্টিক দিয়ে ভরাট করে নিতে হবে।

চুলের স্টাইল নির্ভর করবে পোশাকের ওপর। শাড়ির সঙ্গে পুরো চুল একপাশে রেখে খোঁপা করে তাতে বেশি করে বেলিফুলের মালা জড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। যাদের লম্বা চুল তারা লম্বা বেণি করে বেলি ফুলের মালা পেঁচিয়ে নিতে পারে। যাদের চুল ছোট তারা ক্লিপ দিয়ে চুল আটকিয়ে ফুল লাগাতে পারেন।

সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে চুল স্ট্রেইট বা কার্ল করে ছেড়ে রাখা যেতে পারে। আবার চাইলে খোঁপা, বেণি বা পনিটেইল ইত্যাদি স্টাইলও করা যেতে পারে। সঙ্গে যোগ করা যায় ফুলের মালা।

কপালে বড় টিপ, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, গলায় পুঁতির মালা, অক্সিডাইজ, মুক্তার গয়না আর পায়ে হালকা পায়েল পরলেই বৈশাখি সাজ পূর্ণতা পাবে।

সন্ধ্যায় মেইকআপের শুরুতে মুখে একটু বরফ ঘষে নিতে হবে। ফাউন্ডেশন দিয়ে মুখ, গলা, ঘাড়ে ভালো করে ব্ল্যান্ড করে মিশিয়ে নিয়ে মুখের বাড়তি খুঁত ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর ফেইসপাউডার দিয়ে ফাউন্ডেশন বসিয়ে নিতে হবে।

পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মানিয়ে চোখে আইশ্যাডো লাগাতে হবে। রাতের সাজে চোখে গাঢ় মেইকআপ বেশি মানানসই। পোশাকের রংয়ে বা সম্পূর্ণ ভিন্ন রং কন্ট্রাস্ট আই শ্যাডোর সঙ্গে নীল, সবুজ, সোনালি বা রূপালি যে কোনো রংয়ের আইলাইনার ব্যবহার করা যেতে পারে। পাপড়িতে ঘন করে কয়েক কোট মাশকারা লাগিয়ে নেওয়া যাবে। চোখের মেইকআপ গাঢ় হলে ন্যাচারাল, বাদামি, পিচ অথবা গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক লাগালে ভালো লাগবে।

গালের চিক বোনের উপর কিছুটা ব্লাশ লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রেও ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কপালের আকার অনুযায়ী ছোট বা বড় টিপ পরা যেতে পারে।

সাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চুল বেঁধে নেওয়া যেতে পারে। আর ছেড়ে রাখতে চাইলে আয়রন, ব্লোডাই, স্পাইরাল ইত্যাদি স্টাইল করা যাবে। চুল বড় হলে লম্বা বেণি বা খোঁপা করে বিভিন্ন ফুল গুঁজে দেওয়া যেতে পারে।

বড় কানের দুল পরলে গলায় কিছু না পরলেও চলবে। তবে হাত ভরে পরা যায় বিভিন্ন রংয়ের চুড়ি।

দুই তিন দিন আগে থেকে ফেইশল, স্কিন পলিশ, মেনিকিওর, পেডিকিওর করে নিলে ভালো। চুলের জন্য প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করুন। এতে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ফ্রেস দেখাবে আর চুল ও ঝলমল করবে।

সব শেষে শিবানী দে কিছু সাধারণ বিষয় লক্ষ রাখার পরামর্শ দিলেন।

আগের রাতেই সব প্রসাধনী সামগ্রী জোগাড় করে হাতের কাছে রাখা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে তৈরি হতে হবে। যেহেতু বাইরে তীব্র গরম তাই ফাউন্ডেশন বা প্যান কেক যাই ব্যবহার করা হোক সেটা যেন ওয়াটার প্রুফ হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অবশ্যই মেইকআপের আগে সানস্ক্রিন লোশন ও সানস্ক্রিনযুক্ত পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

মুখে, গলায়, ঘাড়ে, পিঠে ও হাতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের ক্ষতি কম হবে। আর সঙ্গে একটি রঙিন ছাতা, ছোটপাখা ও এক বোতল পানি রাখা উচিত।

Tags: