muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি স্থগিতের আহ্বান: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার

Ravina  un
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু ওই বিচারে নানা অনিয়ম এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখার অভিযোগ রয়েছে।”

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালে জামায়তের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আপিল আদালতও সেই রায় বহাল রাখে।

সর্বোচ্চ আদালতের সেই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও গত সোমবার খারিজ হয়ে গেলে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের আলোচনা শুরু হয়।

শ্যামদাসানি বলেন,

“জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাইব্যুনালের বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলে আসছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ হবে না।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনারের দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৬টি রায়ে বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ে বিচারক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই জামায়াত নেতা ছিলেন আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান। তিনি যেভাবে যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন, তাতে ‘সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না’।

আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় আসে শেরপুরের নালিতাবাড়ি থানার সোহাগপুর গ্রামে ১৯৭১ সালে ১২০ জন পুরুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে হত্যার ঘটনায়।

রায়ে বলা হয়, কামারুজ্জামান যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘নাৎসি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ’ ছিল।

ওই রায়ে ‘কোনো ত্রুটি না পাওয়ায়’ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করা হয়েছে বলে আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়।

তবে কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজ প্রসঙ্গে শ্যামদাসানি দাবি করেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মেরিটের ভিত্তিতে তা না শুনে আবেদনটি খারিজ করে দেয়।”

জাতিসংঘ সনদে বাংলাদেশের সই করার কথা মনে করিয়ে দেয় মুখপাত্র বলেন, ওই সনদ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে; অন্যথায় তা হবে অধিকারের লঙ্ঘন।

জাতিসংঘ কোনো বিচারের ক্ষেত্রেই সাজা হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নয় জানিয়ে এই সাজার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানান রাভিনা শ্যামদাসানি।

এর আগে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়ে ফাঁসি স্থগিত রাখরা আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই।

জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি পশ্চিমা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের এই বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারের আন্তর্জাতিক মান পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং অন্য অনেক দেশে না থাকলেও এই ট্রাইব্যুনালে আসামির জন্যও আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।

যেসব সংগঠন সাজা হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড কার্যকর নিয়ে কথা বলেছে, তাদের আহ্বানের জবাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা। এক্ষেত্রে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ১২ জন নাৎসির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কথা বলছেন তারা।

Tags: