যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষককে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছে।
রোববার দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষক সিভিল ইনঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়ে আগামী শনিবার পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে।
সূত্র জানায়, ফেসবুকে বুয়েটের ‘আড়ি পেতে শোনা’ নামক একটি গ্রুপে বুয়েট শিক্ষার্থী দিপু সরকার গতকাল শনিবার ‘কামারুজ্জামনের ফাঁসি কার্যকর’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম মন্তব্য করেন, ‘এটা কখনোই হবে না। অপেক্ষা কর ও দেখ। দিন দিন তোমরা সবাই রাজাকারদের চেয়েও খারাপ হবে। অবিচার কখনোই ভালো হয় না’। এরপর শিক্ষার্থীরা তার প্রতিবাদ করলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পরে ওই শিক্ষক আবার লিখেন, ‘জয় মা কালি, জয় ইন্ডিয়া। বলুন জয় বাংলাদেশ, এটা অরাজনৈতিক। কেননা জয় বাংলা দুটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে’।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার দুপুর ১টায় বিভাগীয় অফিসে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বসে ছিলেন। ওই সময় বুয়েট ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি শুভ্র জ্যোতি ঠিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনকের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী ওই শিক্ষককে বিভাগের অফিস থেকে বের করে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এতে অধ্যাপক জাহাঙ্গীরের নাক ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে টানতে টানতে ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে বুয়েটের অন্য শিক্ষকরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রফেসর জাহাঙ্গীরের পক্ষ নিয়ে ভিসির কার্যালয়ে জড়ো হন। এতে ছাত্রলীগের একটি অংশও যোগ দেয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাফেটেরিয়া থেকে প্রফেসর জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যায়।
ঘটনার পর বিকেলে শিক্ষক সমিতি এক জরুরি বৈঠক ডাকে। এতে শিক্ষকরা দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে এক সপ্তাহের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
এদিকে এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে ভিসি প্রফেসর খালেদা ইকরাম বলেন, ‘প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবেন। সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’