muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

গৃহবধূ নির্যাতনকারিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ

bobita-205x300
ঢাকা: নড়াইল লোহাগড়া থানার গৃহবধূ ববিতার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদেরকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গেপ্তার করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৮ মের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে করা এক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মাদ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

জনস্বার্থে হিউম্যান রাইডস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন এ রিট আবেদনটি করলে শুনানি শেষে আজ আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে গৃহবধূ ববিতার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন তাপস কুমার বিশ্বাস।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামের ছালাম শেখের ছেলে সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সঙ্গে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্লার মেয়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ববিতার (২১) মন দেয়া-নেয়া হয় বেশ কয়েক বছর আগেই। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এর ফাঁকে শফিকুল যা করার তাই করেছে। এরপর অনেকটা চাপের মুখেই ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর গোপনে বিয়েও করে তারা। নববধূ সেজে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার ভাগ্যও জোটেনি ববিতার।

এরইমধ্যে বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যেন প্রেম নাটকের ইতি টানার চেষ্টা শুরু হয় শফিকুলের। এরপর স্বামী সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্য শফিকুল শেখ ও তার শাশুড়ি তাকে ঘরে তুলে না নিতে টালবাহানা শুরু করে। ববিতার অনেক কাকুতি-মিনতিতেও যেন মন গলেনি ওদের। একপর্যায়ে আদালতে মামলা করেন ববিতা। এতে শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

ববিতার মা খাদিজা বেগমের ভাষ্য মতে, ২৯ এপ্রিল শফিকুল ছুটিতে বাড়ি এসে ববিতাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বারবার খবর দেয়। ববিতা সরল মনে স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে ওই বাড়িতে যান। যাওয়ার পরপরই তাকে ঘরে আটকে ফেলা হয়। পরদিন সকাল ৭টার দিকে তার স্বামী শফিকুল, ভাসুর হাসান শেখ, শ্বশুর সালাম শেখ, শাশুড়ি জিরিন আক্তার, চাচাশ্বশুর কালাম শেখ, প্রতিবেশী নান্নু শেখ ও আজিজুর রহমান আরজু মিলে ববিতাকে বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারায় ববিতা। গ্রামবাসী সবাই যেন সিনেমা-নাটকের ন্যায় প্রত্যক্ষ করেছে এই দৃশ্য। এরপরও কেউ এগিয়ে আসেনি।

গ্রামবাসীর ভাষ্য- ওদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেনি, এগিয়ে যায়নি ববিতার সহযোগিতায়। ক্ষমতার দাপট, কেননা ওরা সবাই আওয়ামী লীগ করে। আজিজুর রহমান আরজু বড় নেতা, কাশিপুর ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক! পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ববিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনার পর থেকে শফিকুল ও তার পরিবারের লোকজন সবাই পলাতক। ঘটনার ৫ দিন পর মঙ্গলবার রাতে ববিতার মা বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। শুধু গ্রেপ্তার হয়েছে শফিকুলের ভাই হাসান শেখ। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান আরজু তো এখনো প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর অন্যদের বাঁচানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত প্রকাশ তো দূরের কথা তিনি উল্টো ববিতা ও তার পরিবারকে অপবাদ দিচ্ছেন এই বলে, ‘একটি মহল ববিতার সঙ্গে বিয়ের নামে ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে শফিকুলের চাকরি খোয়ানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

ববিতা ও তার মায়ের সর্বশেষ ভাষ্য মতে, মামলা তুলে নিতে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এদিকে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গুরুতর আহত ববিতা এখন নড়াইল সদর হাসপাতালে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ/ এম ইউ

Tags: