মঙ্গলবারের এ ভূমিকম্পটি ৭ দশমিক ৩ মাত্রার বলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে (০৬:৫০ জিএমটি)এ ভূমিকম্প হয়।
কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চলসহ বাংলাদেশেও। ভূমিকম্পের ধাক্কায় নেপাল সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যে ৫ জন এবং চীনের তিব্বতে একজন নিহত হয়েছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নেপালের কোদারি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার গভীরে। এলাকাটি থেকে রাজধানীর কাঠমান্ডুর দূরত্ব ৭৬ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। গতমাসের ভূমিকম্পে ওই ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
প্রাথমিক খবরে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছ থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরের দোলাখা এলাকায় ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে পুলিশের মুখপাত্র কমল সিং কাঠমান্ডুতে ৩ জন এবং এর উত্তরে সিন্ধুপালচোকের চৌতারায় ৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
চৌতারায় ভেঙে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে আরো মানুষ। ধ্বংসস্তুপ থেকে লাশ টেনে বের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন। এলাকাটিতে কয়েকটি ভূমিধস হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় প্রধান জেলা কর্মকর্তা কৃষ্ণা গয়াওয়ালি।
কাঠমান্ডুতে ধসে পড়েছে দুটো ৫ তলা ভবন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তানদিখেল এলাকায় তার চোখের সামনে ভবন ধসে পড়েছে। অন্য আরেকজন বলেন, যাত্রী বোঝাই একটি ট্যাক্সি উপর একটি ভবন ধসে পড়তে দেখেছেন তিনি। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেপালের কাঠমান্ডুতে গত ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এতে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি ছিল অনেকটা আগের ওই ভূমিকম্পের মতোই। এ ধরনের ভূমিকম্প অনেকবেশি প্রাণঘাতী হয়, কারণ এতে করে স্বল্প এলাকাজুড়ে কম্পনটির তীব্রতা অধিকমাত্রায় অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পর এক ঘণ্টার মধ্যে আরো তিনটি পরাঘাতে মঙ্গলবার কেঁপে ওঠে নেপাল ও এর আশেপাশের এলাকা। এর মধ্যে একটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৩।
কাঠমান্ডুর মানুষেরা আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসে। শহরটির দোকান মালিকেরা দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়। পরে দোকান খুললে লোকজন খাবার ও পনি মজুদ করার জন্য বিভিন্ন দোকানে ভীড় জমায়। ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন বলেন, “এটি খুবই ভয়ঙ্কর।”
ভূমিকম্পের পরপরই বিদুৎহীন হয়ে পড়েছে কাঠমান্ডু। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়েছে। লোকজন মোবাইলে পরষ্পরের খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে গেছে।
গতমাসের ভূমিকম্পের পর নেপালের অনেক বাসিন্দা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের সিমলায় আশ্রয় নেয়া নেপালি এক যুবক আইএএনএসকে বলেন, “খোঁজ খবর নিতে আমি আমার ভাইয়ের নাম্বারে বারবার ফোন করার চেষ্টা করছি, কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না।”
রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল এভারেস্টের বেসক্যাম্পের কাছে। ওই ক্যাম্পটি ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পর বরফধসে ১৮ পর্বতারোহী নিহত হওয়ার পর খালি করে ফেলা হয়েছিল।