muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

রক্ত কথা বলে তা বঙ্গবন্ধুর নাতনি বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বিজয়ে প্রমাণিত হয়েছে

শেখ-হাসিনা-সংসদ
বৃটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিন বঙ্গকন্যাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, রক্ত কথা বলে তা বঙ্গবন্ধুর নাতনি বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বক্তব্যে ও বিজয়ে প্রমাণ হয়েছে। অথচ নির্বাচনে টিউলিপকে হারাতে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র (তারেক রহমান) সব ধরনের চেষ্টা করেছে, এমনকি ভোটারের ওপর হামলা পর্যন্ত করেছে। আসলে এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই বাংলাদেশের মেয়ের বিজয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

আজ মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিন নারী রুশনারা হক, রুপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিকী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সংসদে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সরকার ও বিরোধী দলের ২২ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিন বৃটিশ এমপিকে অভিনন্দন জানান।
সংসদে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রায় দুই ঘণ্টার আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মেহের আফরোজ চুমকি, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, আবু জাহির, এ কে এম শাহজাহান কামাল, মুনিরুল ইসলাম, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ও সানজিদা খানম, স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী টিউলিপি সিদ্দিকীসহ নির্বাচিত তিন বাঙালি বৃটিশ এমপির জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করে বলেন, আমাদের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেই চলতে হয়েছে। জাতির পিতা যে আদর্শ শিখিয়ে গেছেন, সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দুই বোন সন্তানদের মানুষ করেছি। আমাদের সন্তানরা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সে জন্য দেশবাসীর দোয়া চাই। তিনি বলেন, সত্যিই এ বিজয় আমাদের গৌরবের। যে ব্রিটিশরা আমাদের ২ শ বছর শাসন করেছে, সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এখন আমাদের তিন কন্যা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা পুরো দেশের গৌরব, গোটা জাতির গৌরব। তাঁরা আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল ও দেশের মানুষকে সম্মানিত করেছে।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পরবর্তী কঠিন ও বন্ধুর পথ অতিক্রমের কথা স্মরণ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন শেখ রেহানাকে নিয়ে আমি স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে গিয়েছিলাম। অল্পদিনেই দেশে ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। বাবা-মাসহ সবাইকে হত্যা করলো ঘাতকরা। দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের ফিরতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান নির্দেশ দিয়েছিল আমরা যেন দেশে ফিরে আসতে না পারি। ১৯৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্বাচিত করার পরই আমাকে দেশে ফিরতে দিলেও জেনারেল জিয়া আমাকে আমাদের ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশে ফিরলেও ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে যায় শেখ রেহানা। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু সততা ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে গেছেন, আমাদের জন্য কিছু সম্পদও রেখে যাননি। যার ফলে শেখ রেহানাকে লন্ডনে পড়াশুনার খরচ বহন করাও অসম্ভব ছিল। লন্ডনে গিয়ে শেখ রেহানা একটা চাকরি নেয়, তার বিয়ে হয়। চাকুরি করেই তাঁর তিন ছেলে-মেয়ে ও আমার ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। তিনি বলেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমিও দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু শেখ রেহানা এখনো বাসে চড়ে গিয়ে চাকরি করে।
বঙ্গবন্ধুর নাতনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর টিউলিপ সিদ্দিকীর পার্লামেন্টে প্রথম ভাষণের সময় উপস্থিত থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রক্ত কথা বলে তা টিউলিপের স্বল্প সময়ে সুন্দর বক্তব্যে তা ফুটে উঠে। এত ছোট্ট মেয়ে যে কী কষ্ট করতে পারে তা নির্বাচনের সময় প্রমাণ করেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সে ভোট চেয়েছে। শত প্রতিকূলতা এবং অপপ্রচার মোকাবিলা করে টিউলিপকে বিজয়ী হতে হয়েছে। টিউলিপের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতা সত্যিই অবাক করার মতো। তিন বঙ্গকন্যাকে বিজয়ী করার জন্য প্রবাসী সকল বাঙালিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে হারিয়ে শুধুমাত্র দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি। দেশের মানুষের কল্যাণ ও উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে উত্তরাধিকার টিউলিপ সিদ্দিকী এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য। অথচ টিউলিপ যাতে নির্বাচিত হতে না পারে সে জন্য লন্ডনে থাকা ফেরারি আসামি তারেক রহমান অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি পরিবার বিপ্লবী, আরেকটি প্রতিবিপ্লবী পরিবার। একদিকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে পালিয়ে থেকে বিকৃত রাজনীতি করছেন। যে নেত্রী (খালেদা জিয়া) নিজের পরিবারকে মানুষ করতে পারেননি, উনি দেশের জন্য কী করতে পারবেন?
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা জন্ম থেকেই লড়াই করেছেন এখনও করে যাচ্ছেন। শত ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ বিজয়ী হয়ে দেশের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, টিউলিপ যাতে বিজয়ী হতে না পারে সে জন্য জামায়াত-শিবির-বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা নানা অপপ্রচার চালায়। এক ফেরারি ক্রিমিনাল (তারেক রহমান) লন্ডনে বসে বিপুল পরিমাণ অর্থও ব্যয় করে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে টিউলিপ বিজয়ী হয়েছেন। টিউলিপের এ বিজয় বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও বাঙালি জাতির মুখ উজ্জ্বলের বিজয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকী যে আসনে বিজয়ী হয়েছেন, সেই আসনে জেতা মোটেই সহজ ছিল না। আসনটিতে উচ্চবিত্ত ও উচ্চবিত্তের আবাসস্থল। এ আসনে ১১ শ ভোটে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের বিজয় সত্যিই একটি চমৎকৃত ঘটনা।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্ত কতবড় উর্বর, তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকী যাতে নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারেন সে জন্য লন্ডনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-বিএনপি সকল শক্তি নিয়োজিত করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।
আবদুল মান্নান বলেন, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ আজ নেতৃত্বের আসনে। এই উপমহাদেশ দুই শ বছর ব্রিটিশের গোলামী করেছে। কিন্তু আজ সময় বদলেছে। সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এখন আমাদের দেশের তিন নারী বিজয়ী হয়ে নেতৃত্বের আসনে বসেছেন। তিন বাঙালি কন্যা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এ বিজয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছেন।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই তিন নারী নিজেদের প্রজ্ঞা, মেধা ও মনন দিয়ে ব্রিটিশদের মন জয় করেই নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মতো বৃটেনে রাতারাতি রাজনীতিবিদ তৈরি করা যায় না, অনেক শ্রম ও কষ্টের মাধ্যমে সেখানে রাজনীতিবিদ হতে হয়। এই তিন নারী বাংলাদেশকে আলোচিত করেছেন।

Tags: