muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

বড় ধরনের পরিবর্তন ও নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি

BNP-Flag
বড় ধরনের পরিবর্তন ও নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি। দল পুনর্গঠন ও পরিধি বাড়ানোকে এবার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী ১ সেপ্টেম্বরই তিনি চমক দেখাতে পারেন। বিএনপিকে শুধু দলের ভিতরে গণ্ডিবদ্ধ না রেখে একটি ‘জাতীয়তাবাদী বৃহৎ ফাউন্ডেশনে’ পরিণত করারও চিন্তাভাবনা চলছে। গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমান্তরালে সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আরও একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজন ‘প্রখ্যাত ব্যক্তি’র যোগদানের ঘোষণাও আসতে পারে বিএনপির আসন্ন ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে।
সূত্র জানায়,

দলে ব্যাপক সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ চলছে। নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যসহ ছোট ছোট তিনটি গ্র“পে ভাগ করে বিএনপি ঘরানার ডজনখানেক বুদ্ধিজীবীকে এ জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মান-অভিমানে দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের ঘরে ফিরিয়ে আনা, ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতাদের গ্রহণ, নানা কারণে বহিষ্কৃতদের মধ্যে যারা দলে আসতে চান তাদের সবাইকেই যুক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। এ প্রক্রিয়ার আওতায় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাও পাইপলাইনে আছেন বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান।সূত্রমতে, বিএনপিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ’৯১ সালের নির্বাচনের আগমুহূর্তের মতো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছেন চেয়ারপারসন। বিকল্পধারা, এলডিপিসহ কয়েকটি দলের নেতাদের বিএনপিতে ফেরার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। যারা নিতান্তই দলে আসতে অনিচ্ছুক তাদের জোটভুক্ত করা হবে। ১ সেপ্টেম্বর কিংবা তার আগে-পরে কয়েকটি দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতার বিএনপিতে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘জোটনেত্রী খালেদা জিয়া জোটে এবং তার দলে যে যেখানে আসতে চান সবাইকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। জাতীয়তাবাদী ঐক্যের প্রতীক এই নেত্রী জীবনের শেষ বেলায় এসে দেশ ও জাতির স্বার্থে আরেকবার দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি তার নিজস্ব উদ্যোগ। তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে জাতীয়তাবাদী পতাকাতলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা কয়েকজন প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করছি মাত্র। আশা করি, শিগগিরই ইতিবাচক ফল আসবে।’এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘দলে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কিংবা মহাসচিব কারও সঙ্গে কথা হয়নি। তবে আমরা তো জাতীয়তাবাদী জোটেই আছি।’ অলি আহমদ বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা ভালো করেই জানে, কী ধরনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের জনসম্পৃক্ততাই বা কতটুকু? আশা করি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় রাজনৈতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে কোনো না কোনো উদ্যোগ অবশ্যই গ্রহণ করবে। জাতিকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধারে জোটনেত্রীও নিশ্চয়ই সঠিক পদক্ষেপটি নেবেন।’ সূত্র জানায়, অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও অলি আহমদের মতো নেতার দলে ফেরার ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এ দুই নেতার পাশাপাশি ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আবদুর রবের মতো নেতাদেরও জোটে দেখতে উদগ্রীব। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি) সোহেল বলেন, ‘বি. চৌধুরী স্যার যেমন ভদ্রলোক, তেমনি ড. কামাল হোসেনও নিরেট ভালো মানুষ। তারা দলে বা জোটে এলে জাতীয়তাবাদী ঐক্য শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি আরও সমৃদ্ধ হবে।’ খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, কে ডান, কে বাম, কে ছোট আর কে বড়- এসব দেখার আর সময় নেই। যারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শরিক হতে চান সবার জন্য আমাদের দরজা উন্মুুক্ত। তবে পিডিপি-প্রধান ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ক্ষোভ ও অনীহা প্রকাশ করে বলেন, ‘বড় দুই দলে শুধু ক্ষমতার লড়াই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একদল লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতিতে লিপ্ত, আরেক দল একই উদ্দেশ্যে ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে লিপ্ত। কাজেই তাদের সঙ্গে ঐক্য করলেই কী, আর না করলেই বা কী!’ সম্মানজনক পদমর্যাদা দেওয়া হলে আবারও দলে ফিরবেন কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আর কখনই শহীদ জিয়ার আদর্শে ফিরতে পারবে বলে মনে করি না। কাজেই আমার পক্ষেও আর বিএনপিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।’ ড. কোরেশী আরও বলেন, ‘বর্তমান এ অবস্থার জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি। আর বিএনপির জন্য কী না করেছি! কখনো কোনো পদের লোভ করিনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। দল গড়েছি। তিনি কখনো পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেননি জিয়া। জ্ঞানী-গুণী ভালো লোক ছাড়া টাউট-বাটপার, লুটেরা শ্রেণির লোকজন কখনই তার কাছে ঘেঁষতে পারত না। কিন্তু এখন ভালো লোকের বড়ই অভাব।’ বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ড. রেদোয়ান আহমেদ, আলমগীর কবির, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানসহ যেসব নেতা বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা বহিষ্কার হয়েছেন সবাইকে দলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমনকি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকেও ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে। প্রয়াত রাজনীতিক মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমান শিগগিরই দলে যোগ দিতে পারেন। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, দল থেকে ক্ষোভ-দুঃখে চলে যাওয়া সবাইকেই ফেরত নেওয়া উচিত বেগম জিয়ার। তবে তার আগে দলটাকে গোছানো উচিত। তিনি বলেন, ‘ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর ড. কামাল সাহেবরা দলে বা জোটে এলে নিঃসন্দেহে সেটি ইতিবাচক খবর। তবে খালেদা জিয়াকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি অথর্ব-অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে যোগ্যদের সঠিক কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই দল ও জনগণের জন্য মঙ্গল।

Tags: