muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে হবে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে

sheikh hasina
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ এ উপ-মহাদেশে সবচেয়ে প্রাচীনতম সংগঠন। ছাত্রলীগ যেনো সবসময়ই একটা আদর্শ নিয়ে চলে। ত্যাগ ছাড়া প্রকৃত নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না। যারা শুধু ভোগের জন্য রাজনীতি করে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারবে না। ত্যাগের মনোভাব থাকতে হবে। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সংগঠনের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জমান সোহাগের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক জয়দেব নন্দী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালী জাতির ইতিহাস, লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। আন্দোলন-সংগ্রামে সূচনা করার উদ্দেশেই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়। বাঙালির প্রতিটি আন্দোলনেই ছাত্রলীগ রক্ত ঝরিয়েছে। শহীদদের তালিকা দেখলেও দেখা যাবে সেখানে অনেক ছাত্রলীগ নেতার নাম রয়েছে। আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। কাউন্সিলররা সরাসরি ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। গণতান্ত্রিক ধারা ছাত্রলীগে অব্যাহত থাকবে। মেধাবী ও নিয়মিত, যোগ্য ও মেধাবী ছাত্ররা যাতে নেতা নির্বাচিত হতে পারেন, সেদিকে নজর দিতে হবে।
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিয়মিত ছাত্ররাই নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি একটি কথাই বলতে চাই ছাত্রলীগ উপমহাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন। আমি চাইবো ছাত্রলীগ যেন একটি আদর্শ নিয়ে চলে। আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম লেখা-পড়া করার জন্য। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তাদেরই নির্বাচিত করতে হবে যারা নিয়মিত ছাত্র।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখেছি। একযোগে সারাদেশে বোমাবাজিও দেখেছি। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনতে। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকে। মনে রাখতে হবে শিক্ষাই হলো জাতিকে উন্নত করে গড়ে তোলার একমাত্র পথ। দেশের সব উন্নয়নের সাথে ছাত্রলীগের অবদান জড়িয়ে রয়েছে। তাদের ভাবমূর্তি যেন কোনো ভাবেই ক্ষুন্ন না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বলবো-বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়তে। তাহলেই জানা যাবে একজন মানুষ আদর্শের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ জাতির পিতার অগ্রণী সৈনিক হিসেবে সব সময় ছিলো। যখন জাতির পিতা কারাগারে বন্দি ছিলেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রলীগের চালিকা শক্তি ছিলেন। তিনি দিক নির্দেশনা দিতেন এবং তার নির্দেশনায় ছাত্রলীগ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন ও সাজা কার্যকরের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একদিন না একদিন বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি করবো। আজ আমার সে প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। তবে এজন্য অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করেছি।
তিনি বলেন, এসব কাজে মূল শক্তি ছিলো সততার শক্তি। সততা থাকলে অনেক দূর যাওয়া যায়। সততার শক্তি অনেক বেশি। শুধুমাত্র সততার শক্তির জোরেই আমি এসব গুরুদায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিম্ন শব্দে থাকতে চাই না, উচ্চ শব্দে যেতে চাই। নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ে পরিণত হচ্ছে দেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। জাতি অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে। আসলে অভিশপ্ত থাকলে কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভিশপ্ত ছিল। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। যারা খুনি তাদের আমরা বিচারের মুখোমুখি করব। কী দুর্ভাগ্য জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে এক সময়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অনেক সরকারই এসেছে, তারা দেশের তেমন উন্নয়ন করতে পারেনি। কারণ তাদের মধ্যে শিক্ষা, দূরদৃষ্টি ও স্বপ্নের অভাব ছিলো। কিন্তু আমাদের নির্দিষ্ট ভিশন রয়েছে। আমরা সেই ভিশনকে সামনে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশে সন্ত্রাস ও খুনিদের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। এই খুনি ও সন্ত্রাসীদের রাজত্ব যেন বাংলার মাটিতে আর ফিরে আসতে না পারে তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিযে যাওয়ার গতি কউ রুখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আর্দশের শক্তিকে দেশের এই গতিতে আরো এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমেই হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এজন্য মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্বে আনতে কাউন্সিলরদের পরামর্শ দেন তিনি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে নতুন নেতৃত্বদানকারীদের বয়সসীমা ২৯ বছরের মধ্যে থাকারও পরামর্শ দেবার পাশপাশি তিনি নির্বাচন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে করারও পরামর্শ দেন।
এর আগে সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেয়। ১০টার মধ্যেই প্যান্ডেল পূর্ণ হয়ে যায় ডেলিগেটস ও কাউন্সিলদের দিয়ে। পরে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের ব্যানার নিয়ে সোহরাওয়াদী উদ্যানের মধ্যে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় সংগঠনের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তাকে স্বাগত জানান। মূল মঞ্চের পাশেই ছোট মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এসময় বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা নেতারা দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মঞ্চে শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময়ে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। পরে মূল মঞ্চে আসন গ্রহন করলে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

Tags: