muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ইসিতে লিখিত অভিযোগও করেছে বিএনপি

municipality election

পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের আভাস ছিল আগেই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষে তার ইঙ্গিতও মিলছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দিন সোমবার দলভিত্তিক এ স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেছে বিএনপি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “আচরণবিধি প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা- তা মনিটরিংয়ে আমাদের কমিটি রয়েছে। তারা নিয়মিত প্রতিবেদন দিচ্ছে। কারও প্রতি অবিচার নয়, বরং ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলে দিচ্ছি।”

তিনি বলেন, “পৌরসভা নির্বাচনে এবার সরাসরি ভোটে অংশ নিয়েছে দল। অভিযোগও আসবে। সবকিছুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। কিন্তু সত্যতা যাচাই করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।”

দশম সংসদ নির্বাচনের পর ধানের শীষ মাঠে ছিল না। এবার দলীয়ভাবে পৌর ভোটে অন্তত ২২০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি লড়বে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে সবকটিতেই মেয়র পদে একক প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ছয়জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ২২০ পৌরসভায়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে দশম সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। এসব দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৭১ জন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপসচিব সামসুল আলম জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েছেন। এখন কারও ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক ও নাম ব্যালট পেপারে থাকবে। কাউন্সিলরদের নাম থাকবে না, শুধু প্রতীক থাকবে।

লিখিত অভিযোগ আসা শুরু ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে

দলভিত্তিক এ পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর দলীয় অভিযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন ইসিতে যান নোয়াখালীর চাটখিলে দলটির মেয়র প্রার্থী মোস্তফা কামালকে অস্ত্রের মুখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ নিয়ে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে প্রার্থীর পক্ষে বলা হয়েছে, “সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা আমাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকি ও চাপ দিয়ে আসছে। তারা ১৩ ডিসেম্বর রাতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের স্বাক্ষর নেয় এবং অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।”

বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ ইসির নজরে আনতে জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাহবুবউদ্দিন বলেন, “এই কমিশন যেসব নির্বাচন করেছে প্রত্যেক নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা কমিশনের যে বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি- তাতে মনে হচ্ছে তারা শক্তিশালী অবস্থান নিতে চাচ্ছেন। আশা করি, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহার দেবেন।”

চাঁদপুরের কচুয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হুমায়ুন কবির জানান, প্রতিপক্ষ দুই প্রার্থী তাকে ও তার সমর্থককে প্রকাশ্যে হুমকি-ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ভোটের দিন বহিরাগতদের দিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তির হুমকি দিচ্ছে। ইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১০ ডিসেম্বর অনুরোধ করেছেন।

জামালপুরের ইসলামপুরে স্থানীয় সাংসদ খজলুল হক খান দুলাল ডাকবাংলো ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাদের শেখের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজেদ মোশাররফের।

তদন্ত করলে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে পারবেন বলে ইসিকে লিখিত আবেদনে বলেছেন তিনি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিপুল চন্দ্র হাওলাদার নির্ধারিত সময়ের আগেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছেন। ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছেন। এসবের সুষ্ঠু তদন্ত চান তিনি।

ইসি সচিবালয়ের মনিটরিং কমিটির প্রধান উপসচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, “প্রতিদিন অন্তত ৮-১০টা করে অভিযোগের প্রতিবেদন ইসিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। লিখিত ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে কোনো বিষয়ে সুপারিশসহ ইসির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, মাঠ কর্মকর্তাদের ইসির নির্দেশনা পাঠানোর পর তা তদন্ত বা যাচাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা।

পত্রিকাই ভরসা ইসির, এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ডজন পৌরসভায়

ইসির উপসচিব সামসুল আলম কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিনিয়ত কিছু পৌরসভায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে; যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি কোনোক্রমেই কাম্য নয়।

মনিটরিং কমিটির বিধি লঙ্ঘন ও অনিয়ম সংক্রান্ত বিবরণীতে দেখা যায়, বগুড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম মন্টু নৌকা প্রতীকে বুধবার থেকে ভোট চেয়েছেন।

বগুড়ার নন্দীগ্রামের মেয়র সুশান্ত কুমার সাহা বিএনপি প্রার্থী। শুরু থেকেই দলীয় প্রতীকে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির আওয়ামী লীগের সাংসদ সোহরাব উদ্দিন আহমেদ ও বাজিতপুরের সাংসদ আফজাল হোসেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রচারে অংশ নিয়ে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন স্থানীয় সাংসদ আবদুর রহমান।

নাটোরের বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেছে সাংসদ আবদুল কুদ্দুস।

এছাড়া নড়াইলের দুই পৌরসভায় সাংসদ কবিরুল হক মুক্তির বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের, চাঁদপুরের কচুয়ায় নাজমুল আলম স্বপনের পক্ষে সাংসদ মহিউদ্দিন খান আলমগীরের প্রচারের অভিযোগের সংবাদ ‘ফাইল’ করেছে ইসি।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে সাংসদ আবু জাহির, রাজশাহীর পবায় সাংসদ আব্বাস আলী এবং খুলনার পাইকগাছা, মাগুরা, ও বরগুনায় রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে হওয়া সংবাদ ‘ফাইল’ করেছে ইসি।

মনিটরিং কমিটির কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে তিন সাংসদকে ইসি শোকজ করেছে এবং দুই মন্ত্রীর বিষয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে।

“এসব অভিযোগ যাচাই করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

সবকিছু রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর

বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে বৈঠক শেষে কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “যেসব অভিযোগের মেরিট রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। বিধি লঙ্ঘনকারী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন রিটার্নিং অফিসার।”

কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, “ইসির সিদ্ধান্তের বা সুপারিশের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। এখন মাঠে নির্বাহী হাকিম রয়েছে। রিটার্নিং অফিসার যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

‘দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে ২০০৭-২০১১ সময়েই সবচেয়ে বেশি কঠোর অবস্থানে ছিল কমিশন।

নিজেদের সময়কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সিরাজগঞ্জে এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম, ইউপি নির্বাচনে একটি পরিষদের নির্বাচন তিন মাস বন্ধ রেখেছিলাম; মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে শুধু সতর্কই নয়, এলাকায় যেতেও দেইনি।”

বর্তমান ইসিকেও ‘দৃষ্টান্তমূলক কিছু’ করে দেখানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তারও পর ছেড়ে দিলে হবে না, ইসিকেও কঠোর হতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাহস দিতে হবে। যাতে করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে মানুষের আস্থা বাড়ে।

Tags: