muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

তথ্য প্রযুক্তি

লাইবা রুটি মেকারের ‘জাদু’ দেখতে ভিড়

dhaka-banijjo-melaমুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ  ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৭৮ নম্বর স্টল। ছোট আয়োজন। কিন্তু স্টলটিতে উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতা এক তরুণী উচ্চ স্বরে বলে চলেছেন, ‘এক সেকেন্ডের জাদু দেখুন। দেশের উদ্ভাবিত যন্ত্রের জাদু দেখুন। মায়ের কষ্ট কমাতে লাইবা রুটি মেকার কিনুন।’

দর্শনার্থী এক তরুণী এগিয়ে গেলেন। ‘লাইবা রুটি মেকার’ যন্ত্রটির হাতল ধরে চাপ দিলেন। যন্ত্রের ভেতর দেওয়া আটার খামি শতভাগ গোলাকার রুটিতে পরিণত হয়েছে! সত্যিই, এক সেকেন্ডের ব্যাপার! দর্শনার্থীদের চোখে বিস্ময়! কী করে সম্ভব হলো—সবার কৌতূহল।

এর পর শুরু হলো একের পর এক প্রশ্ন। ‘দেশের পণ্য?’ ‘কে বানিয়েছে?’ ‘দাম কত?’

স্যুট পরা এক ব্যক্তি কিছুক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। দাম জিজ্ঞাসা করলেন। জানা গেল, তিনি দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের জেনারেল ম্যানেজার ইয়াছিন গোনি চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের শোরুম থেকেই বৈদ্যুতিক রুটি বানানোর যন্ত্র কিনেছিলাম। ওটাতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি। আর সেটা দিয়ে বানানো রুটি খাবার উপযুক্ত নয়। লাইবা রুটি মেকার কিনতে এসেছি।’

সহাস্যে ইয়াছিন গোনি চৌধুরী বলেন, ‘লাইবা রুটি মেকার কিনে স্ত্রীর জন্মদিনের উপহার দেব।’

উদ্ভাবক : দ্রুত রুটি বানানোর এই যন্ত্রটির উদ্ভাবক মো. হুমায়ুন কবীর। তাঁর বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামে। ২০১১ সালে এই যন্ত্র বানানোর কাজে হাত দেন হুমায়ুন। পরে আরো অনেক চেষ্টায় আজকের এই আধুনিক পরিবেশবান্ধব রুটি মেকার উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মাননা পেয়েছেন এবং পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

বিশেষত্ব : লাইবা রুটি মেকার বিশ্বের প্রথম বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশবান্ধব রুটি বানানোর যন্ত্র। এই যন্ত্রে অনেক ধরনের রুটি বানানো যায়। আর যেকোনো বয়সের মানুষ এই যন্ত্রের মাধ্যমে অতিদ্রুত রুটি বানাতে পারবে। কাঠের এই যন্ত্র চালাতে বিদ্যুৎ লাগে না বলে সাশ্রয়ী।

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বৈদ্যুতিক রুটি মেকারের চেয়ে আমার যন্ত্রে রুটি বানানো সহজ ও সুবিধাও বেশি। তবে আমার যন্ত্র আটা সেদ্ধ করে দেয় না। আর রুটিও ভেজে দেয় না। তবে শতভাগ প্রাকৃতিক স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকবে। ফলে দেশে-বিদেশে এর চাহিদা বাড়ছে।

প্রথমবারের মতো মেলায় অংশগ্রহণ : এবারই প্রথম বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে লাইবা রুটি মেকার। তরুণ কর্মীদের আহ্বানে একবার হলেও ঝুঁকছেন মেলার দর্শনার্থীরা।

দর্শনার্থী ও মেলার অন্য একটি স্টলের কর্মী রফিক বললেন, ‘মেলার শুরুতেই জমিয়ে ফেলেছে লাইবা রুটি মেকার। এটি অদ্ভুত একটি মেশিন। সেকেন্ডের মধ্যে রুটি বানানো যায়। আমি ভাবছি, মেলায় কাজ করে যে টাকা পাব, তা দিয়ে একটি কিনব।’

বাণিজ্য মেলার আলোচিত উদ্যোক্তা : প্রথমবার বাণিজ্য মেলায় স্টল দিয়ে এরই মধ্যে দারুণ সুনাম কুড়িয়েছে লাইবা রুটি মেকার। মেলায় স্টল দেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির মালিক-কর্মীরা ৭৮ নম্বর স্টলে এসে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকছেন। একজন দেখছেন, আরেকজনকে ডেকে এনে দেখাচ্ছেন। অনেকেই রুটি মেকার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অগ্রিম দিয়ে বুকিং করছেন।

দর্শনার্থীরা জানালেন, লাইবা রুটি মেকার এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ : মেলায় আসা বিদেশি দর্শনার্থীরা লাইবা রুটি মেকার দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং প্রশংসা করেছেন।

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড হেন্সি বলেন, ‘আমি এটি দেখে খুবই আনন্দিত হলাম। এটি আসলেই দারুণ। এটি কি অনলাইনে পাওয়া যাবে?

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমাদের ওয়েবসাইট (www.rutimaker.com) আছে। এই ওয়েবসাইটে লাইবা রুটি মেকার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এ ছাড়া গুগল, ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবেও ‘Laaibah Ruti Maker’ লিখে খোঁজ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।

দেশীয় উদ্যোগের প্রশংসা

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ পর্যন্ত মোট গ্রাহকের প্রায় ৩৭ শতাংশই আগে বিদেশি বৈদ্যুতিক রুটি বানানোর যন্ত্র কিনেছিলেন। তাঁরাও লাইবা রুটি মেকার যন্ত্রটি কিনেছেন। বৈদ্যুতিক রুটি বানানোর যন্ত্রে সেদ্ধ আটার রুটি হয় না বলে ওই সব গ্রাহক সন্তুষ্ট ছিলেন না। আমার যন্ত্রে সেদ্ধ আটার রুটিসহ অনেক ধরনের রুটি হয়। গ্রাহকরা অনেক খুশি। তাঁরা আমাকে নিয়মিত ক্রেতা পাঠান।’

অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে : শতকরা ৮০ ভাগ ক্রেতা অনলাইনের মাধ্যমে জেনে লাইবা রুটি মেকার কিনতে যোগাযোগ করেন। অনলাইন বিজ্ঞাপন মাধ্যমে এর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

মডেল ও দাম : লাইবা ব্র্যান্ডের রুটি মেকারের তিন মডেল রয়েছে। দ্রব্য-উপকরণ ও মানের বিবেচনায় এগুলোর দামের ভিন্নতা রয়েছে। এগুলোর দাম যথাক্রমে তিন হাজার ৮৫০ টাকা, চার হাজার ৬৫০ টাকা ও পাঁচ হাজার ৫৫০ টাকা। দামের ভিন্নতায় এসব মডেলের কার্টনে বিভিন্ন উপকরণ ফ্রি দেওয়া হয়।

লাইবা রুটি মেকারের স্মার্ট কার্টনে অন্য যেসব উপকরণ থাকবে :

১. লাইবা রুটি পেপার : লাইবা রুটি মেকারের রুটি বানানোর পুরো পদ্ধতির সঙ্গে এই পেপার ব্যবহার আবশ্যক। যেকোনো মানের পলিথিন বা পেপার ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন থেকে যায়, তেমনি রুটির আকার ঠিক থাকবে না। প্রতি ১৫ দিন পর পর পেপার পরিবর্তন করা আবশ্যকীয়। মেলার জন্য ২০০ বর্গফুটের লাইবা রুটি পেপার (ফুড গ্রেড) ফ্রি দেওয়া হচ্ছে, এর বাজারমূল্য ৭৫০ টাকা।

লাইবা রুটি পেপার জাপান থেকে আমদানি করা হয়। প্রাতটি মেশিনের সঙ্গে এক প্যাকেট দেওয়া হয়। এক বান্ডেল লাইবা রুটি পেপার চার বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

২. ব্যবহারবিধি ও ভিডিও-ডিভিডি : লাইবা রুটি মেকারের কার্টনে ইংরেজি ও বাংলায় লিখিত একটি ব্যবহার বিধিসহ ভিডিও টিউটোরিয়ালের ডিভিডি থাকবে। আর পেপার আটকানোর কাজে ব্যবহার করা যায় এমন এক ধরনের টেপ দেওয়া হয়।

নকলবাজদের থেকে দূরে থাকতে আহ্বান

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘অনেকে আমার রুটি মেকার দেখে এটি বানিয়েছে। তবে কয়েকটি কাঠের টুকরা এক করলেই এই যন্ত্র বানানো যাবে না। এ জন্য যথাযথ পদ্ধতি ও পরিমাপ জানা প্রয়োজন। নকলবাজরা এসব না জানায় তারা যা বানাচ্ছে, তা দিয়ে রুটি হচ্ছে না; বরং তারা এমন সব উপাদান ব্যবহার করছে, যা খাদ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া লাইবা রুটি মেকার রুটি বানানোর জন্য যেসব উপকরণ ও বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়, তা নকলবাজরা দেয় না।’

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘কিছু লোভী মানুষ আমার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি দেখে মনে করেছে, এটি বানানো বোধ হয় খুব সহজ। তারা এটি বানাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে এবং পরে তারা খরচ তুলতে নামমাত্র মূল্যে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছে। তা দিয়ে রুটি হয় না। তাদের বাতিল পণ্য বাজারে লাইবা রুটি মেকারের সুনাম নষ্ট করছে। আর তারা অনলাইনেও প্রচার চালাচ্ছে। এতে ক্রেতারা ঠকছেন এবং বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’

দুর্নাম ঠেকাতে লাইবা রুটি মেকারের প্রচারকাজ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিলবোর্ড, লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইউটিউবসহ যাবতীয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লাইবা রুটি মেকারের প্রচার চালানো হয়েছে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দেশের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতে আমাকে ও আমার উদ্ভাবিত লাইবা রুটি মেকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। টিভিগুলোও আমাকে ঘিরে খবর প্রচার করেছে। সুনাম একদিনে রচিত হয় না। দুর্নামে সময় লাগে না। গ্রাহকদের কাছে আহ্বান, বিভ্রান্ত হবেন না।’

অনলাইনে লাইবা রুটি মেকার সম্পর্কে জানতে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট (www.rutimaker.com) এবং ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/laaibahrutimakerfactory) ভিজিট করতে আহ্বান জানিয়েছেন হুমায়ুন কবীর।

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/07-01-2016/মইনুল হোসেন