muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করবে টাঙ্গাইলে ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ

 মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট : বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মিত হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরে। কেবল বেশি গম্বুজ নয়, এর মিনারটিও হবে সু-উচ্চ। প্রাথমিকভাবে মসজিদটি তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মসজিদটি নির্মিত হলে এটি স্থাপত্যশৈলীর অনন্য কীর্তি এবং ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে, ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে সুদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিতব্য মসজিদটির ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন।

কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১ গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের মিনারের উচ্চতা হবে ৪৫১ ফুট বা ১৩৮ মিটার। যা প্রায় ৫৭ তলা ভবনের উচ্চতার সমান। উচ্চতায় বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু মিনার হবে এটি। বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৮৯ ফুট বা ২১০ মিটার, যা ৬০ তলা ভবনের সমান। তবে এটি ইটের তৈরি নয়। ইটের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার হচ্ছে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনার। যার উচ্চতা ৭৩ মিটার বা ২৪০ ফুট এবং এতে সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯টি।

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই মো. হুমায়ুন কবির সার্বক্ষণিক মসজিদটির নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নির্মাণাধীন অবস্থার মধ্যেই এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় শুরু হয়েছে।’

নির্মাণাধীন এ মসজিদ কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে প্রায় সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা।

হুমায়ুন কবির মসজিদের গম্বুজ সম্পর্কে বলেন, ‘২০১টি গম্বুজের মধ্যে সবচেয়ে বড় গম্বুজটি হবে ৮১ ফুট উচ্চতার। এটি থাকবে মসজিদের ছাদের মাঝখানে এবং এর চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। এই গম্বুজগুলোর ওপর থাকবে তামার প্রলেপ। মূল মসজিদের চার কোণায় ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার থাকবে। পাশাপাশি ৮১ ফুট উচ্চতার আরো চারটি মিনার থাকবে। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতলবিশিষ্ট মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদটির দেয়ালে পিতল দিয়ে লেখা থাকবে পূর্ণ ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরীফ। আর মসজিদের প্রধান দরজা বানানো হবে ৫০ মণ পিতল দিয়ে। যাতে লেখা থাকবে মহান আল্লাহর পবিত্র ৯৯টি নাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি পাঁচতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুঃস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য  হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হবে আলাদা ভবন। ওই ভবনে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের থাকার জন্য ডাক বাংলো ও বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা থাকবে।’

তিনি জানান, মসজিদটির পশ্চিমে ঝিনাই নদী থেকে মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে এবং নদীর ওপরে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। চারপাশে করা হবে দেশি-বিদেশি ফুল সমৃদ্ধ বাগান।

দিকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা মসজিদ প্রাঙ্গণে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন মসজিদটির নির্মাণ সৌন্দর্য।

ঢাকা থেকে ইফতেখারুল আলম মসজিদটি দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই মসজিদটির কথা শুনছিলাম। আসি আসি করেও দেখতে আসা হচ্ছিলো না। তাই এবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মসজিদটি দেখতে এসেছি।’

চট্টগ্রাম থেকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা রেজুয়ান বলেন, ‘দেশে এমন একটি মসজিদ তৈরি হচ্ছে শুনেই এলাম। আশা করি নির্মাণ কাজ শেষ হলে আবার এসে নামাজ পড়ব।’

কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামের উপস্থিতি ও ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াতে আকাশ পথের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাড। এ ছাড়া সড়কপথ, নৌ-পথ এবং রেলপথে যাতায়াতের সুব্যবস্থাও থাকছে।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কল্যাণ ট্রাস্ট নিবন্ধন না পেলে হয়তো মসজিদটি তৈরি করা কঠিন হতো।’

এ জন্য সরকারের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি মৃত্যুর পর কোনো সম্পত্তি রেখে যেতে চাই না। তাই সব সম্পত্তি এই কল্যাণ ট্রাস্টে দান করে মসজিদের কাজ শুরু করেছিলাম। আমি জনতা ব্যাংকে আট বার সিবিএ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার পরিচিত কিছু ব্যবসায়ী বন্ধুর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত মসজিদের কাজ প্রায় সম্পন্ন করে এনেছি। মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ নিজেই এর নির্মাণ শেষ করার তওফিক দিবেন।’

 

Tags: