muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুস্থ ও অসহায়দের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা ॥

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক দুস্থ ও অসহায় মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ সরকারিভাবে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ১ হাজার ঘর, ১০ হাজার টিউবওয়েল ও ১ হাজার সেলাই মেশিনসহ বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ সরল প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষকে লোভ দেখিয়ে কৌশলে তার এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে গ্রামা লের ২ সহস্রাধিক দুস্থ ও অসহায় নারী পুরুষের নিকট থেকে প্রতারণা করে প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের স্ত্রী মো. ছকিনা (২৮) বাদী হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মেছবাহ উ্িদন আহমেদ এর বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদে ও কুলিয়ারচর থানায় পৃথক পৃথকভাবে অভিযোগ দাখিল করেছে। ছকিনা অভিযোগ করে বলেন, সে ভাইস চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিন আহমেদের হাতে এলাকার ১২৪ জন দুস্থ ও অসহায় নারী পুরষের নিকট থেকে ৬৫টি ঘর বাবদ ২ লাখ ২৭ হাজার ৫শ টাকা, ৩৮টি সেলাই সেশিন বাবদ ৯৫ হাজার টাকা, ১২টি টিউবওয়েল বাবদ ২০ হাজার ৪শ টাকা ও ৯ জনের নিকট থেকে বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য ২৭ হাজার টাকা তুলে দেন। প্রায় ৭/৮ মাস অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান তাদের মালামাল কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাত করেছে। টাকার জন্য আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে দিবে বলছে। অনেক গরীব মহিলা সমিতি থেকে ঋণ তুলে, সুদে টাকা এনে, গৃহপালিত পশু ছাগল ও মুরগী বিক্রয় করে টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন ও ঘরের জন্য আমার মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছে। তারা মালামাল কিংবা টাকা না পাওয়ায় দিনরাত কান্না কাটি করে বেড়াচ্ছে।
মধ্য সালুয়া গ্রামের আক্কাছ মিয়ার স্ত্রী স্বপ্না (৩০) অভিযোগ করে বলেন, সে ২৯টি ঘর বাবদ ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, ১১টি সেলাই মেশিন বাবদ ২৭ হাজার ৫শ টাকা ও ১৭টি টিউবওয়েল বাবদ ২৮ হাজার ৯শ টাকা ভাইস চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিনের হাতে তুলে দেয়। ৭/৮ মাসের মধ্যে ৩টি সেলাই মেশিন ও ২টি টিউবওয়েলের টাকা ফেরত দিলেও বাকী জিনিস ও টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাত করেছে। উক্ত সালুয়া গ্রামের আব্দুল আওয়ালের স্ত্রী মাজেদা (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, সে তার ভাই রাজু (২৫) কে সাথে নিয়ে মেছবাহ উদ্দিনের হাতে ৩৬টি ঘর বাবদ ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা ও ১১টি সেলাই মেশিন বাবদ ২৭ হাজার ৫শ টাকা দেওয়ার পর ভাইস চেয়ারম্যান তাকে দুটি সেলাই মেশিন দিলেও অন্য জিনিস কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাত করেছে। চর কামালপুর গ্রামের মো. আঙ্গুর মিয়ার স্ত্রী শিলা (২২) অভিযোগ করে বলেন, সে ১৮টি ঘর বাবদ ৬৩ হাজার টাকা, ১৫ সেলাই মেশিন বাবদ ৩৭ হাজার ৫শ টাকা ও ৩টি টিউবওয়েল বাবদ ৫ হাজার ১শ টাকা ভাইস চেয়ারম্যানের হাতে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি কোন মালামাল কিংবা টাকা পয়সা ফেরত পায়নি। এছাড়া জগতচর গ্রামের লোকমানের স্ত্রী দুলেনা (৩০) ৮ লাখ, মনোহরপুর গ্রামের মুকলেছ মিয়া ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকাসহ উপজেলার প্রায় ২ হাজার নারী পুরুষের নিকট থেকে মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি টাকা নিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার টিউবওয়েল ও ৫০টি সেলাই মেশিন বাজার থেকে ক্রয় করে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করলেও বাকী প্রায় এক কোটি টাকার উপরে আত্মসাত করেছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর বাজারের মেসার্স মা বাবার দোয়া এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক মো. মাহাবুব আলম মামুন খান (৩০) অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে উপজেলা পরিষদের সীলযুক্ত ও মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এর স্বাক্ষরিত স্লীপের মাধ্যমে তার দোকান থেকে ৮৫৬টি টিউবওয়েল ক্রয় করে। যাহার মুল্য ৪২ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৮০ টাকা। এসব মালামালের মধ্যে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে ৩০ লক্ষ ১২ হাজার ৮৮০ টাকা না দিয়ে আত্মসাত করেছে। বর্তমানে তারা পথে বসেছে। অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘর, টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, যাদের নিকট থেকে আমি টাকা পয়সা এনেছি তাদের কিছু কিছু মালামাল দেওয়া হয়েছে। আর যাদের মালামাল দেওয়ার বাকী আছে তাদেরকে আগামী জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মালামাল অথবা টাকা ফেরত দিয়ে দিব। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল মিল্লাত বলেন, সরকারিভাবে ঘর, টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড দেওয়ার জন্য কোন টাকা পয়সা লাগে না। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, বাদীর মাধ্যমে অভিযোগটি থানায় পাঠিয়েছি।

 

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৯-১১-২০১৬ইং/ অর্থ 

Tags: