muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

প্রচ্ছদ

যাযাবর হাসান মিয়ার গল্প

সোহেল ইবনে ছিদ্দিক, স্টাফ রিপোর্টারঃ 

খুলনা বিভাগের আশাশুনি উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের ৬২ বছর বয়সি ৪ সন্তানের জনক আবু হাসান মিয়া এখন যাযাবর জীবন কাটাচ্ছে। তার সাথে কথা বলে জানা যায় গত ৭-৮ বছর যাবত ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ বা আফিসের বারান্দায় খেয়ে না খেয়ে যাযাবর জীবন কাটাচ্ছে। ৪ সন্তানের জনক আবু হাসানের কথাগুলি শুনে সে রাতে আমি নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি। মা-বাবা যে সন্তানের জন্ম দেয় ভবিষ্যত জীবনে তাদের পাশে থাকার জন্য আর সে সন্তানের জন্যই আজ তাদের ঘরছাড়া যাযাবর জীবন কাটাতে হচ্ছে। ৬২ বছর বয়সেও মাথায় তুলে নিতে হচ্ছে ৪০-৫০ কেজি ওজন। আর রাতে কুকুর বিড়ালের মতো রাস্তা-ঘাটে ঘুমাতে হচ্ছে। আবার সেখানেও তারা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছে না, কুকুর বিড়ালের মতো দুর দুর করে সেখান থেকেও তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মানুষ। কি অপরাধ তার? মানুষ হিসেবে জন্মানোই বোধহয় তার সবচাইতে বড় অপরাধ। আবু হাসানের জন্মের ১৫ দিন পুর্বেই বাবা মইজউদ্দিন মারা যায়। জমিজমা বলতে কিছুই রেখে যায়নি বাবা মইজউদ্দিন। মা লোকের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে কোন রকম দিন কাটায়, রাতে লোকের বাড়িতেই ঘুমায়, সেই থেকেই তার যাযাবর জীবন শুরু।

14914523_1840774692820959_647807228_n

১৫ বছর বয়সে সে তার মাকেও হারায়। জন্ম থেকেই তার জীবন সংগ্রাম শুরু যা থেকে সে আজও মুক্তি পায়নি। সে গ্রামের এক গরিব মেয়েকে বিয়ে করে শশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকত। সেখেনে থেকেই সে চার সন্তানের জনক হল। বড় ছেলের নাম শাহিন বর্তমানে সেও বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। সেও শশুর বাড়িতে থাকে, বউ শাশুরির কথামতো চলে কিন্তু মা বাবার কথা ভাবার সময় নেই।

ছোট ছেলের নাম তুহিন তাকে সেখানকার এক মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিল কোরআনে হাফেজ বানাবে বলে কিন্তু ঠিকভাবে টাকা দিতে না পারায় তাকে আর হাফেজ বানানো হলোনা। হাসানে কোরআনের ৯ পাড়া মুখস্ত করেছিল। ছোট মেয়ে সাবিনাকে বিয়ে দিতে গিয়ে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল। কণ্যা দায় যে এত কষ্টের তা তার আগে জানাছিল না। বড় মেয়ে নিলুফাকে বিয়ে দিতে কোন যৌথুক লাগেনি।কিন্তু ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে বড় পক্ষকে ২০০০০/= যৌতুক দিতে হয়। আমাদের দৃষ্টিতে তা অতি সামান্য মনে হলেও দিনমুজুর আবু হাসনের জন্য তা অনেক। দিন আনে দিন খায় কোনভাবে দিন চালায় এত এত টাকা সে দিবে কোথা থেকে তাই বাধ্য হয়ে সে গ্রামের এক হিন্দু ধনি ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ২০০০০ টাকা ঋণ নেয়। লোকের কাছ থেকে চেয়ে টেয়ে ২০০০ টাকা সুদ করেছিল সে, বাকি ১৮ হাজার টাকার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৯০০ টাকা সুদ দিতে হয়। সুদের টাকা যোগার করতে সে দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরায় আশুলিয়া বেরিবাধে বালি উঠানোর কাজ করে। তাও যদি মেয়েটা শান্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু সে শান্তি কি আর আছে যৌতুক হিসেবে টাকার পাশাপাশি কিছু ফার্নিচার দেয়ার কথা সেগুলোর জন্য মেয়েটাকে প্রতিনিয়ত শশুর বাড়ির লোকদের কথা শুনতে হয়।

মেয়েটা বাবার বাড়ি এসেই শুধু কান্নাকাটি করে শশুর শাশুরির কথা যে আর সে সইতে পারে না। আগের টাকার সুদ এই দিতে হিমশিম খাচ্ছে এখন কিভাবে যে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের বলতে আছে একটা ব্যাগ। ব্যাগে ১টা তালা, বাটি, একটা কাথা, একটা ছেড়া মশারি, একটা ছেড়া শার্ট, একটা লুঙ্গী আর একটা গামছা। লুঙ্গি পড়ে সকালে কাজ করতে যায় আবার কাজ শেষে রাতে ঐ লুঙ্গী পড়ে গোসল করে গামছা পড়ে শুয়ে থাকে আর লুঙ্গীটা শুকাতে দেয়। নিজের জন্য আর একটা লুঙ্গী না কিনে ঐ টাকা দিয়ে যদি মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারে সেই জন্য আর একটা লুঙ্গী আর কেনা হলনা তার। ৬২ বছর বয়সে এসেও সন্তানের কথা ভেবে রাতে ঘুমাতে পারে না বাবা। আর সেই সন্তানেরা বাবার কথা ভাবার কোন সময়েই নেই। তাহলে কে ভাববে এই আবু হাসানের কথা। শুধু এই আবু হাসান নয় এমন হাজারো আবু হাসান ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে কোন স্কুল কলেজ বা অফিস আদালতের বারান্দায় রাত্রি যাপন করে তাদের গল্প কে শুনে? তাদের খুজ কে নেয়? কে বাড়িয়ে দেবে তাদের দিকে সহযোগিতার হাত?

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/২৫-১১-২০১৬ইং/ অর্থ 

 

 

Tags: