muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

Uncategorized

সূর্য ভিলা’ ছিল আত্মঘাতী হামলা প্রস্তুতির মূল কেন্দ্র

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট 

রাজধানীর আশকোনার জঙ্গি আস্তানা ছিল আত্মঘাতী হামলা প্রস্তুতির প্রধান কার্যালয়। ‘সূর্য ভিলা’ নামের তিন তলা বাড়ির নীচতলার ফ্ল্যাট থেকে ১৯টি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা সুইসাইডাল ভেস্ট, ২টি পিস্তলসহ নানা বিস্ফোরক উপকরণ উদ্ধার করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন, এই বাড়ি থেকে রাজধানীতে বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলার ছক করা হয়েছিল। কোনো ভিআইপি অথবা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা হয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ‘রিপল ২৪’ জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো সেই নারীর মৃত্যু পেট ফেটে হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে জানা গেছে। তার পেটে বেঁধে রাখা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি মারা যান বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ওই নারীর দেহের আলামত দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে বিস্ফোরকের কারণেই এটি হয়েছে।
ওই নারীর শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে ওই নারীকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, নিহত ওই নারী পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী শাকিনা।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাকে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীর কাছে আশকোনার এই আস্তানাটি জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলা প্রস্তুতির প্রধান কার্যালয়। এখান থেকেই আত্মঘাতী হামলা পরিকল্পনার ছক করা হয়।
এদিকে এই জঙ্গি আস্তানায় দেশের শীর্ষ জঙ্গিদের যাতায়াত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মেজর জিয়া এবং মুসাসহ আরো অনেক জঙ্গির আনাগোনা ছিল এই বাড়িতে। আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক অপরিচিত লোকজন এই বাড়িতে যাতায়াত করত। যাদেরকে এলাকার লোকজন আগে কোনোদিন দেখেনি।
এদিকে আশকোনার জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড, অস্ত্র ও বিস্ফোরক এখন পর্যন্ত দেশের কোনো জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় চালান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাড্ডার সাঁতারকুলে জঙ্গি অভিযান চালানো হয়। সেই সূত্র ধরে মোহাম্মদপুরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেসব অভিযানে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। মিরপুরে অভিযান চালিয়ে ১টি গ্রেনেড উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, আশকোনা এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত আফিফ কাদেরী ওরফে শহীদ কাদেরী ওরফে আদরের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম বাটকামারি গ্রামে। আদর তার সাংগঠনিক নাম। তার বাবা তানভীর কাদেরী গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন।
আদরের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক। তানভীর কাদেরীর দাদা আব্দুল ওয়াহেদ ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ার অঞ্চলের লোক। আনুমানিক ১৯১০ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ করতে এসে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
এদিকে নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা মাইনুল ইসলাম মুসাই রাজধানীর পূর্ব আশকোনার সূর্য ভিলা ভাড়া করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুলশানে হামলাসহ জঙ্গিদের নানা অভিযান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মুসার অস্ত্রও শনিবার অভিযানের সময় পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। নব্য জেএমবির এই শীর্ষনেতাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছে পুলিশ। আশকোনায় অভিযানে তার স্ত্রী ও মেয়েকে পাওয়ার পর এখন তার তথ্য পেতে পুরস্কার ঘোষণার পরিকল্পনাও চলছে বলে জানা গেছে।
বছরের মাঝামাঝিতে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নজিরবিহীন হামলার পর জঙ্গিদের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযানের ধারাবাহিকতায় পূর্ব আশকোনার সূর্য ভিলা নামে বাড়িটির সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়েকে নিয়ে মুসার স্ত্রী স্বজনদের অনুরোধে ধরা দেন পুলিশের কাছে। তার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন মিরপুরে গত ২ সেপ্টেম্বর আরেক অভিযানে নিহত সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও মেয়ে। ওই বাড়িতে অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যান এক কিশোর ও এক নারী।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। তবে আশপাশে আরো কোনো বিস্ফোরক আছে কীনা সেটা নিয়ে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আশকোনার ওই এলাকায় মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস বেশি। এই ঘটনার পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মা কিভাবে শিশুকে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, এটাও ভাবিয়ে তুলেছে এলাকার বাসিন্দাদের। তবে পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, এই ধরনের কোনো বিষয় নজরে আসলে পুলিশকে দ্রুত অবহিত করতে। নিহত আদরের মৃদদেহ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/  ২৪ – ১২-২০১৬ ইং / মো: হাছিব

Tags: