muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

প্রচ্ছদ

“একুশ আমাদের বাঙালি করেনি, করবেও না”

আজ ১৮ই ফেব্রুয়ারি । ২১ আসতে বাকী নেই বেশি । বাকী থাকলেই বা কি , ২১ কোন দিনই আমাদের বাঙালি করেনি করবেও না । এটিই এখন বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ ইতিহাস । যাই হোক , আলোচ্য বিষয়ে আসা যাক। ১৩ এবং ১৪ তারিখ যথাক্রমে বাঙালির জীবনে দুটি বড় দিবস। বড় দিবস যতটা না সর্বসাধারণের , তার চেয়ে বেশি কপোত কপোতীদের ও বিভিন্ন কর্পোরেট (অ) গণমাধ্যমের। দিবসের কোন দায় থাকেনা । দ্বায়িত্ব যা থাকে তা হল মানুষের । মানুষ চাইলেই পারে তার জীবনের প্রতিটি দিবসকে স্মরণীয় করতে। এর জন্যে ১৩, ১৪ কি ২১ এর ও প্রয়োজন হয় না।

বাঙালি জাতি যদি তার ভাষাকে যথাযথ সম্মান করতো, যদি পশ্চাৎদেশে সামান্য চর্বি জমতেই বাংলা ভুলে গিয়ে বাংলিশ, হিন্দি, আরবি ভাষা না আওড়াত , তবে কিন্তু আমার কথা শুনে কারো খোঁচা লাগবার আশংকা থাকত না । আমরা যতটা না আমাদের বাংলা ভাষাকে, ভাষা শহীদ’দের সম্মান জানানোর জন্যে ভাষা দিবস বা শহীদ দিবস পালন করি তার’চে বেশি পালন করি নিজেদের জোয়াল আর গলার দড়ির খুঁটি যাচাই করবার জন্যে। এবং এটাই চিরন্তন সত্যি।

শহীদ মিনারে ফুল দিলেই কি শ্রদ্ধা জানানো হয়ে যায় , যদি মনের অভ্যন্তরে শহীদের জন্যে ভালবাসার ফুল না ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়! অনেকেই বলবেন, এটা কেমন কথা … ! আমরা কি আমাদের শহীদদের ভালবাসি না, খালি আপনিই বাসেন যে যে বড় বড় কথা পাড়ছেন ! ?

বুকে হাত দিয়ে যারা এরকম ভাবছেন, তারা বলুন, কি করতে ইচ্ছে হয়? কিংবা কোনদিন কি আদৌ কিছু করতে ইচ্ছে হয় একজন বাঙালি হিসেবে , একজন মাগনা স্বাধীনতালব্ধ নাগরিক হিসেবে সেই সব মুক্তি যোদ্ধাদের চেতনার জন্যে, তাদের ত্যাগের জন্যে ? !? নাকি কেবল, শহীদের কাহিনী কিংবা নাটক এর ভিডিও চিত্র দেখে চোখের কোনে জল টেনে আনলেই শেষ হয়ে গেল সব ! টিস্যু পেপারের সাথে ওয়েস্ট পেপার বাসকেটে পড়ে থাকলেই কাবার হয়ে গেল আমাদের প্রতিদানের অভিপ্রায়!

আগেই বলেছিলাম, ২১ আমাদের বাঙালি করেনি। করবেও না। এবং এ সত্য একটি নির্মম ইতিহাস। আর এই ইতিহাস আমরাই রচনা করে চলেছি আমাদের ত্যাগের মহিমান্বিত ইতিহাসকে নিজ হাতে মুছে ফেলে । ফুলের তলে, সঙ্গীতের তলে, ভাষণের তলে, বড় বড় প্রতিশ্রুতির তলে চাপা পড়ে মুমুর্ষু আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত।

তাই, আসুন, বই মেলায় গিয়ে সমরেশ মজুমদারের বই কিনে, আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ‘অ আ ক খ’ লেখা জামা জড়িয়ে প্রভাতফেরীতে গিয়ে ভেটকি মারা সেলফি দিয়েই কেবল বাঙালি হবার বাসনায় ক্ষান্ত না দিয়ে দেই । বসন্ত পালন করুন সমস্যা নেই। ভ্যালেন্টাইন পালন করুন তাতেও আপত্তি তুলছি না, কেবল প্লিজ, মেকি ভাব ধরবেন না। অন্তত, বাংলাদেশকে গড়তে যে সংগ্রামগুলো হয়েছে সেই সব বিষয়ে তো অবশ্যই না।

নিজের চেহারা সাজিয়ে তো খুব আয়না দেখেন সবাই, সেই রকম ভাবেই নিজের মননকেও সাজান দয়া করে । একদিনে বদঅভ্যাস দূর হয় না জানি , চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। দেখবেন , ২১ এ ফেব্রুয়ারি লাগবে না। সামনের বছর ২১ এ ফেব্রুয়ারি আসবার আগেই আপনি বাঙালি হয়ে যেতে পারবেন । কথা দিচ্ছি আপনাকে , আপনি যাচাই করুন , প্রমাণ আমি করব।

ছবিঃ ১৯৫৩ সালের প্রথম প্রভাতফেরি।

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৮-০২-২০১৭ইং/ অর্থ 

Tags: