muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

অপরাধ

ডা. টি আর জয়ের বাচ্চা চুরির মামলা, অন্যদিকে সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ 

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত নগর মাতৃসদনের প্রসূতি ও গাইনী বিশেষজ্ঞ সার্জন এবং নরসুন্দা রিভারভিউ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সার্ভিস সেন্টারের শেয়ার হোল্ডার ডা. টি আর জয়ের বিরুদ্ধে গত ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৬ইং তারিখে যমজ সন্তান গর্ভধারিণী এক মায়ের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দুটি যমজ বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর সেখান থেকে একটি বাচ্চা চুরির অভিযোগ উঠে এবং কিশোরগঞ্জ শহরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গর্ভধারিণী মা করিমগঞ্জ উপজেলার জালুয়াবাদ গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদের স্ত্রী শামীমা আক্তার গত ১০ই জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর ৬, ৭ ও ৮ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৪ঠা ডিসেম্বর নরসুন্দা রিভারভিউ ক্লিনিকে প্রসূতি শামীমা আক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে তিনি ৩৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার গর্ভে দু’টি সন্তান রয়েছে উল্লেখ করা হয়। গত ৩১শে ডিসেম্বর সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে রোগী তার স্বামী আবদুর রশিদ এবং ফাতেমা আক্তার ও রাজিয়া আক্তার নামে দুই স্বজনকে নিয়ে নরসুন্দা রিভারভিউ ক্লিনিকে যান। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে আবার তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। আল্ট্রসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক ডা. টি আর জয় ও ক্লিনিকের পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন জানান, শামীমা আক্তারের গর্ভে দু’টি সন্তান রয়েছে এবং সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়া সন্তান প্রসব সম্ভব নয়। ওইদিনই দুপুর ১২টার দিকে ক্লিনিকের পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে ডা. টি আর জয়সহ তার টিম রোগীর দেহে লোকাল এনেসথেশিয়া দিয়ে অপারেশন করে দু’টি ছেলে সন্তান প্রসব করান। রোগীকে পুরো অজ্ঞান না করায় তিনি দুই সন্তান প্রসবের দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অপারেশনের পর কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে একটি ছেলে সন্তান পান। এ সময় তিনি তার সঙ্গে আসা স্বজনদের কাছে তার অপর সন্তান কোথায় জানতে চাইলে তারা জানান, ডাক্তার টি আর জয় একটি সন্তান দিয়েছেন। এতে প্রসূতি শামীমা আক্তার আশ্চর্যান্বিত হন। তিনি তার স্বজনদের নিয়ে ক্লিনিকের পরিচালক নাসির উদ্দিন ও ডাক্তার টি আর জয়কে তার অপর সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তেজিত হয়ে একেক সময় একেক কথা বলেন। একপর্যায়ে আসামিরা এবং অজ্ঞাত কয়েকজন তাদের মারতে উদ্যত হয় এবং ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। রোগী সুস্থ না হলেও গত ৩রা জানুয়ারি তাকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এ সময় রোগী অপর সন্তান ছাড়া ক্লিনিক ছাড়বেন না বলে জানান। এ অবস্থায় গত ৫ই জানুয়ারি সন্তানসহ রোগীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়া হয়। বাদীর অভিযোগ, তার অপর সন্তানকে আসামিরা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। ১০ই জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় স্বামী ও স্বজনদের সঙ্গে ওই ক্লিনিকের সনোলজিস্ট ডা. এসএইচ শাকিলকেও সাক্ষী করা হয়।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি চলমান রয়েছে এবং আগামী ২৭-০৪-২০১৭ইং তারিখে আসামীরা আদালতে হাজিরের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মামলার বাদী শামীমা আক্তারের কাছে জানতে গেলে তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ’কে বলেন, ডাক্তার টি আর জয় আমার দুটি সন্তান থেকে একটি সন্তান চুরি করে অন্যথায় বিক্রিকরে একদিকে আমাকে করেছে সন্তান হারা এবং আমার সন্তানকে করেছে মা হারা। বর্তমানে ডাক্তার টি আর জয় বিভিন্ন জায়গায় টাকা পয়সার মাধ্যমে লোক ভাড়া করে আমি এবং আমার পরিবারকে হুমকী-ধামকি দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হয়রানী করছে। আমার কাছ থেকে মামলার মূল অবলম্বন আল্ট্রাসনো রিপোর্টের মূল কপি হাতিয়ে নেয়ার জন্য গুন্ডা ভাড়া করেছে। আমার একমাত্র ভাই এবং আমাদের পরিবার এখন ভয়ে ভয়ে অসহায় দিনযাপন করছি। তাই আমি আইন এবং প্রশাসনের কাছে ডাক্তার টি আর জয়সহ আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

এছাড়াও ডাক্তার টি আর জয়ের বিরুদ্ধে মাদক এবং ক্লিনিকের নারী কর্মচারীদের গায়ে হাত দেয়া সহ বিভিন্ন ধরনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের ঘটনা ও সন্তানহারা শামীমা আক্তারের আল্ট্রাসনো রিপোর্টটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। যা ‘মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠে’ সংরক্ষিত রয়েছে।

 

চলবে…

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৬-০৪-২০১৭ইং/ অর্থ 

Tags: