muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

মুক্তিযোদ্ধার কথা

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ 

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে প্রস্তুত হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন’। বুধবার (৪ মে) এ সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করলে  তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে তার শাস্তি পূর্ববর্তী দণ্ডের দ্বিগুণ হবে। প্রস্তাবটি গ্রহণের আগে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই সংসদকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই এই সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, শিগগিরই এটি  মন্ত্রিপরিষদে উঠবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বর্তমান মেয়াদেই আইনটি সংসদে পাস হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির এই সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলেন, ‘গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের শাস্তির জন্য আইন প্রণয়ন করা হোক।’ প্রস্তাবটিকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হোক। এই প্রস্তাব আমরা তা গ্রহণ করলাম। এই আইনের একটি খসড়া অল রেডি প্রস্তুত হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসের একটি সিদ্ধান্তেও এই ঐতিহাসিক সত্যের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন করে বিএনপির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও বলেন, এই ‘প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস’ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই।

‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন-২০১৬’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে,  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তখনই, যখন ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তারিখ থেকে ১৯৭১ সালের  ২৫ মার্চের মধ্যবর্তী ঘটনাগুলো কেউ অস্বীকার করবে। পাশপাশি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলি অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের কোনও ঘটনাকে হেয় প্রতিপন্নের উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে  বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিলে ও প্রচার করলে সেই কাজকেও ইতিহাস বিকৃতি হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে,  সরকারিভাবে প্রকাশিত ১৯৭১  সালের  ১  মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়র ইতিহাস সংক্রান্ত দলিল,  যেকোনও ধরনের প্রকাশনার অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়ন; পাঠ্যপুস্তকসহ যেকোনও মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অসত্য, অর্ধসত্য, ভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন; মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা বা জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ ও তাহাদের সম্পত্তি লুট বা তাতে অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত যেকোনও তথ্যের অবনমন; মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোনও ঘটনা, তথ্য বা উপাত্ত ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপনও ইতিহাসের বিকৃতির আওতাভুক্ত। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেখা; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার সশস্ত্রবাহিনী, রাজাকার,  আলবদর,  আলশামস  ও  শান্তি  কমিটির  বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পক্ষে কোনও যুক্তি দেওয়া বা প্রচারণা চালানো; মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ কোনও ধরনের অপপ্রচার করলে তাও ইতিহাস বিকৃতির অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এই অপরাধের দণ্ড বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি এই অপরাধ করেন, তার শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এই আইনে উল্লিখিত কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডা ভোগ করার পর কোনও ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন, তাহলে পূর্ববর্তী দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ আইনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি আইনের জন্য তদবির করে আসছি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে খালেদা জিয়া নতুন করে যখন মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস বিকৃতি শুরু করলেন, তার দুই দিন পরই আমরা সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রস্তাব দেই। এর পরপরই আইনমন্ত্রী ও আইন কমিশনকে স্মারকপত্র দেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আইনের ফলে খালেদা জিয়ার মতো লোকদের মুখ অন্তত বন্ধ হবে। তারা আর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করার ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ পাবেন না।’

Tags: