muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

ঈদকে ঘিরে বেপরোয়া হিজড়া চাদাবাজি

পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী প্রতিনিধি ।। রাত পোহালে ঈদ। তবে ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে প্রায় প্রতিদিনিই সকাল।থেকে রাত পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজি করছে হিজড়াদের কয়েকটি দল।

এছাড়া কর্মস্থল থেকে নাড়ির টানে বাড়িতে ফেরার পথে আসতেই অনাকাঙ্খিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ট্রেনে কিংবা বাসে যাত্রীরা স্টেশনে আসা মাত্র তাদের সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে হিজড়াদের কয়েকটি গ্রুপ। সকাল আর রাত বলে কথা নেই । হিজড়াদের টাকা না দিয়ে রেহায় পাচ্ছে না কেউই।
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে হিজড়াদের এমন চাঁদাবাজি যেন আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অবশ্য মানবতার খাতিরে কেউ তাদের হাতে অর্থ তুলে দিলেও বেশির ভাগই দিচ্ছেন আত্মসম্মানের ভয়ে।

নগরীর শিরোইল বাসষ্টেশন এলাকা এবং রেলওয়ে ষ্টেশনের ভেতরে দলে দলে ঘুরে বেড়ায় হিজড়াদের কয়েকটি দল। ঘরমুখো মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের কাছে অর্থ আদায় করা হয় হিজড়াদের কাজ। এদের একজনকে অর্থ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে দলের অন্যান্যরা এগিয়ে আসেন। জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে তবেই যাত্রীদের ছাড়েন। সেই সাথে অশ্লীল কার্যকলাপ তো আছেই। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের অর্থ দিয়ে বিদায় নেন যাত্রীরা।

শুধু তাই না। রাজশাহী হতে দূরপাল্লা যাওয়ার রেলে চড়ে অর্থ আদায় করে হিজড়াদের দল। এদের প্রধান টার্গেট তরুণরা। সাধারণত পরিবার কিংবা মহিলা সাথে থাকলে সেসব যাত্রীদের উত্যক্ত করে না। তবে একাকী কোনো তরুন দেখলে, তাদের গলার কাটা হয়ে যায় হিজড়ারা। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের হাতে টাকা দেয়া হবে ততক্ষণ তাদের পিছু ছাড়ে না। এটা যেন নিত্যদিনের বিষয়। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ কিছু বলতে দ্বিধা করেন। প্রশাসনেব পক্ষ থেকেও থাকে না বাধা।

বুধবার আহসান হাবিব নামক এক যাত্রী ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন। তিনি জানান, ট্রেন থেকে নামতেই প্লাটফর্মে স্বজনের আগে দেখা মেলে হিজড়ার সাথে। সে প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে টাকা চায়। প্রথমে ২০ টাকা চায়। এরপর তাকে টাকা না দিতে চাইলে পাশ থেকে ফুলবানু নামে অপর এক হিজড়াকে ডাক দেয়। এরপর সে এসে ৫০ টাকা চায়। বাতবিতন্ডা শেষে ১০ টাকা দিয়ে বিদায় দিয়ে রক্ষা পান তিনি। এগুলো অনৈতিক হয়রানি। কে কোন অবস্থায় আছে তা না দেখে সরাসরি এসে কৌশলে শারিরীক হয়রাণি করে। প্রশাসন চাইলে তাদের বাধা দিতে পারে। কিন্তু করে না।

শুধু ষ্টেশন এলাকায় নয় । নগরীর সাহেব বাজার,।গণকপাড়া, নিউমার্কেট, রেলগেট, এবং রেলওয়ে মার্কেটের বিভিন্ন ছোট বড় দোকান এবং কোম্পানীর শোরুমসহ রেষ্টুরেন্ট গুলোতে গিয়ে চাঁদা আদায় করছেগ হিজড়াদের কয়েকটি গ্রুপ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট দোকানগুলোতে।সর্বনিন্ম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। আর বড় শোরুম অথবা রেষ্টুরেন্ট গুলোতে সর্বনিন্ম ৫০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা করে আদায় করছে। হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর জনজীবন।

বাটার মোড়ের বাটা শোরুমের ম্যানেজার স্বপন বলেন, অর্থ দিতে আপত্তি জানালে দোকানীদের পড়তে হচ্ছে বিব্রত অবস্থায়। কখনও কখনও শোরুমের ক্রেতাদের বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। হিজড়াদের দশ জনের একটি দল এসে প্রথমে।২ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের ভালোভাবে বোঝানোর পরে ১ হাজারের নিচে মানতেই
চায় না। অবশেষে ৬০০ টাকা দিলে তারা চলে যায়। এই অতিরিক্ত টাকা কোম্পানী কখনওই।দিবে না।এদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থাও কেউ নিবে না।

কাপড়ের শোরুম দর্জি বাড়ির ম্যানেজার সোহেল রানা বলেন, অভিযোগ করে বলেন আমাদের বেচাকেনা বেশি তাই আমাদের ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। দোকানের ভেতরে ক্রেতা থাকলেও তারা বিব্রত হয়ে চলে।যেতে থাকে। অত:পর বাধ্য হয়ে তাদের ১৫০০ টাকা দিতে হয়। লোকলজ্জার ভয়ে।এদের সাথে যুক্তি তর্কও করা যায় না। আত্মসম্মান বাচিয়ে তাদের টাকা দিয়ে ক্রেতাদের ধরে রাখতে হয়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার নগরীর বাজার সংলগ্ন একটি মোবাইলের দোকানে অশ্লীলতার ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করে হিজড়ারা। মালিক অবশেষে ২ হাজার টাকা দিলে সেখান থেকে বিদায় নেয় তারা। পরক্ষনেই পানদোকানে গিয়ে চাঁদা আদায় করতে লাগে হিজড়াদের একটি দল। এ সময় পান দোকানের পাশে দাড়ানো শিমুল নামক এক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে হিজড়ারা তাকে বেদম মারধর করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়।

অত:পর উলঙ্গ হয়ে অন্যান্য পথচারীদের নানা ভাবে গালাগাল দিতে থাকে। আর এই সব কাণ্ড দেখতে জমায়েত হয় শতশত মানুষ। কিন্তু গালাগাল দিতে বাদ রাখেনি কাউকেই।

প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহিদ জানায়, রাস্তায় যাকে পাচ্ছে তাকেই গালাগাল করছে। আর একটু পর পর কাপড় খুলে ফেলছে। রোজা থেকে একটা মানুষ কতক্ষণ সহ্য করে। পাশেই থানা তাও এদের ভয় নাই। তারা দেদারসে অশ্লীলতা করে যাচ্ছে।

এভাবে নগরীর বিভিন্ন শোরুম আর রেস্টুরেন্ট গুলোতে দলে দলে অর্থ আদায় করে বেড়াচ্ছে হিজড়াদের দল। হিজড়াদের এহেন উপস্থিতি আর অশ্লীল কর্মকাণ্ডে চাঁদা আদায়ে ক্ষোভ জন্মেছে ওই সব এলাকার দোকান গুলোতে। হিজড়াদের হাত থেকে অনেক সময় রেহাই পাচ্ছেনা পথচারীরাও।

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০২-০৯-২০১৭ইং/ অর্থ

Tags: