muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

বগুড়ায় দই মূল্যবৃদ্ধি, ঘটছে বাকবিতন্ডা

বগুড়া থেকে এম নজরুল ইসলাম : ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স বা পন্যে মূল্য ছাড় অফার থাকলেও বগুড়ার দইয়ের বাজারে ধরেছে আগুন। প্রত্যেক বছর বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে বেড়ে যায় দইয়ের দাম। এবারের ঈদে ১শত টাকার দই এখন ২শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের হাকানো দামেই দই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। বগুড়া সদর সহ জেলার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, শেরপুর, কাহালু, ধুনট, গাবতলী, দুপচাঁচিয়া, মহাস্থান, শিবগঞ্জ, আদমদীঘি, সান্তাহার, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা উপজেলা ও পৌর এলাকা সহ বিভিন্ন বাজারে দই বিক্রি হচ্ছে ডাবল দামে। এনিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে।
বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, এশিয়া সুইটমিট ও দইঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ির রুচিতা, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথার চিনিপাতা. চারমাথাসহ শতাধিক শোরুমে পসরা সাজিয়ে দই বিক্রি হচ্ছে। আবার বগুড়া শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত, শেরপুরের রিপন দধি ভান্ডার, সৌদিয়া, জলযোগ, বৈকালি ও শুভ দধি ভান্ডার, নন্দীগ্রাম সদরের বিসমিল্লাহ, ভাইবোন ও বাংলা দধিভান্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়। প্রত্যেক বছরের মতোই এবারের ঈদেও দইয়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের চাপ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১শত টাকার সরার দইয়ের মূল্য হাকানো হচ্ছে ২শত টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় নন্দীগ্রাম সদরের আব্দুল জলিল ও মাহবুব নামের দুই ক্রেতার সাথে। তারা জানান, এক সপ্তাহ আগেই একটি সরার দই কিনেছি ৯০টাকা থেকে ১শত টাকা দরে। এখন সেই দই কিনতে ১৮০টাকা থেকে ২৫০টাকায়। কি আর করার আছে। বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা উল্লেখ করে ক্রেতারা বলেন, ক্রেতাদেরকে জিম্মি করে এক ধরনের চাঁদাবাজী করছে দই বিক্রেতারা। সেদিকে যেন দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দধিভান্ডার কর্মচারি বলেন, ঈদের কারনে উৎপাদনের তুলনায় দই চাহিদা বেড়েছে। এজন্য ইচ্ছেখুশি বেশী দাম হাকানো হচ্ছে। যাতে করে ক্রেতারা দুটি নিতে এসে একটি দই ক্রয় করে।
শেরপুর সদরের জামাল নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আগের দিন ১শত টাকা দরে দুটি দই কিনেছি। আর আজ কিনতে হলো ২২০টাকা দরে। বগুড়া জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রায় সবকটি দধিভান্ডারেই চলছে দ্বিগুন মূল্যে দই বিক্রি। ফলে রিতিমত বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
সূত্রমতে, স্বাধীনতার পর বগুড়ায় দই তৈরিতে নতুনত্ব নিয়ে আসে দুটি মুসলিম পরিবার। তারা হলেন বগুড়া শহরের মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলী। ’৯০ এর দশকের শুরুর দিকে প্যাকেজিং ও দই সংরক্ষণেও আনেন নতুনত্ব¡। ওই সময় থেকে মনোরম ও সুসজ্জিত শোরুম করে দই বিক্রির প্রচলন শুরু হয়।
স্থানীয় দই কারিগরদের তথ্যমতে, দই তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে গাভীর খাঁটি দুধ এবং চিনি ব্যবহার করা হয়। একমণ দুধ থকে ২৫ কেজি দই উৎপাদন হয়। দুধ ও চিনি এক টিনের ড্রামে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রচ- তাপমাত্রায় তেঁতুলের খড়ি দিয়ে সিদ্ধ করতে হয়। পরে সিদ্ধ করা দুধ মাটির হাঁড়িতে ভরে বাঁশের তৈরি ছাতা আকৃতি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। আর ওই ছাতার ঢাকনার মাঝখানে তেঁতুল খড়ির কয়লাও দিতে হয়। এভাবে ৮ ঘণ্টা ঢেকে রাখার পর তা জমে সুস্বাদু দইয়ে পরিণত হয়। বিয়েসহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের আপ্যায়নে দইয়ের প্রচলন রয়েছে। ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বগুড়ায় তৈরি দই প্রথম যায় বাণিজ্যিকভাবে। এ মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল বগুড়ার দই।

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৪-০৯-২০১৭ইং/ অর্থ

Tags: