গাজীপুর : বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তাহলে আওয়ামী লীগের ভাগ্যে ২৫টি আসনও জুটবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাঘটিয়া ওয়েলফেয়ার মাঠে শুক্রবার বিকেলে বিএনপির প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহ’র স্মরণসভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে- তারেক রহমানকে নির্বাসিত রেখে আর দেশে ফিরতে না দেওয়ার। ষড়যন্ত্র চলছে বিএনপিকে ধ্বংস করে দেওয়ার, নির্মূল করে দেওয়ার। ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আর ফিরিয়ে না দেওয়ার। যত দিন দেশনেত্রী আছেন, তারেক রহমান আছেন, যত দিন এ দেশের একজনও দেশ প্রেমিক মানুষ আছে, ততদিন এ ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি আপনারা এ ষড়যন্ত্র করছেন, চক্রান্ত করছেন, বিএনপি যেন নির্বাচনে আসতে না পারে। কারণ আপনারা জানেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলেই আপনাদের ভরাডুবি হবে। বিএনপি যদি নির্বাচন করে তাহলে আওয়ামী লীগের ভাগ্যে ২৫টি আসনও জুটবে না। এ কারণেই যত রকম কারসাজি করা, কারচুপি করা, চক্রান্ত করা দরকার, আপনারা তা করছেন।’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা সবসময় বলেছি, আমরা সংঘাত চাই না, সংলাপ চাই, সমঝোতা চাই। যে অপকর্ম আপনারা করেছেন কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে দিয়ে, যে অপকর্ম আপনারা করেছেন ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন করে, ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে, সেই অপকর্ম ভুলে যান।’’

মির্জা ফখরুল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আসেন আলাপ-আলোচনা করে আমরা একটা পথ বের করি। যে পথ দিয়ে আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটা নির্বাচন করতে পারি। যে নির্বাচনে সবাই অংশ গ্রহণ করবে, জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচন করতে চাই। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু সেজন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ, সমান অধিকার দিতে হবে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী আপনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটা নিরপেক্ষ লোকের হাতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেন।’’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করে বলেছি, আপনারা নিরপেক্ষভাবে দেশের মানুষ আপনাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধানের মাধ্যমে, সেই ক্ষমতানুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করবেন। কারো কথা শুনবেন না। প্রয়োজনে আপনি সেই সমস্ত মন্ত্রণালয় আপনার হাতে নিয়ে নেবেন, যেই সমস্ত মন্ত্রণালয়ে কারচুপি করার সম্ভাবনা থাকে অথবা প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন আমাদের ডেকেছিল। আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়ে এসেছি। আমরা বলেছি- এখন যে পার্লামেন্ট আছে, যেটা তারা নিজেরাই তৈরি করেছেন। জনগণ ভোট দেয়নি। সেই পার্লামেন্টকে ভেঙে দিতে হবে পরবর্তী নির্বাচনের আগে। যদি তা ভেঙে না দেওয়া যায়, তা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। আমরা বলেছি- সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’’

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে বার বার বলেছি আমরা। আমরা বলেছি, যে দেশগুলো আজকে মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে চীন, ভারত, রাশিয়া তাদের কাছে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়া উচিত এবং তাদের বোঝানো উচিত। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তখন তারা শোনেননি। যার ফলে  নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেনি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকের এই মঞ্চ থেকে আমি আবার দাবি করছি- আপনারা অতি দ্রুত জাতীয় কনভেনশন ডাকেন। সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন টিম তৈরি করে সেই সব দেশ সফর করেন। জাতিসংঘে যান, তাদের বাধ্য করেন ওই সমস্যা সমাধানে।’’

বিএনপির প্রয়াত নেতা হান্নান শাহকে স্মরণ করে ফখরুল বলেন, ‘‘হান্নান শাহ প্রকৃতপক্ষেই ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। আমাদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আজ তার মতো সাহসী মানুষের দরকার। যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন।’’

কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও শ্যামা ওবায়েদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, হুমায়ুন কবির খান, মিজানুর রহমান, মো. মুজিবুর রহমান ও মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ।