muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

নরবড়ে সাঁকোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিশুদের স্কুলযাত্রা

মোঃ মেহেদী হাসান, গাইবান্ধা ।। হাতে ও পিঠে স্কুল ব্যাগ। ২০ জনেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী একটি বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করছে। ছোট্ট পাঁচজন সামনে আর বড়রা পেছনে। ইতোমধ্যে সাঁকোর উপরেই তিন মিনিট পার হয়ে গেছে। সাঁকোটির শেষ প্রান্তে এসে এক ছাত্রী সাঁকো থেকে নদীতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরেক ছাত্র নদীতে লাফ দিয়ে শিশুটিকে ধরে আবার সাঁকোর উপরে তুলে দেয়।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের মেঘারচর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার এমন ঘটনা প্রায় নিত্যদিনের।
স্থানীয়রা জানান, এই গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলেয়া নদী পার হওয়ার জন্য গ্রামের বাসিন্দারা তিন বছর আগে নদীটির উপর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। পরে দীর্ঘদিনেও আর মেরামত না করায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এই সাঁকোটির উপর দিয়ে দেড়শতাধিক ছাত্রছাত্রী ও সহস্রাধিক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। নদীতে পড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বই, খাতা ও পোশাক ভিজে গেলে সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না।
স্থানীয়রা আরও জানান, সাঁকোটি পার হওয়ার সময় বাঁশের খুঁটিগুলো নড়ে। এ সময় ভীত হয়ে শিশুরা থেমে থেমে নদী পার হয়। আবার কেউবা হাত ধরে সাঁকোটি পার করে দেয়। পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপিনাথপুর, ময়মন্তপুর, ফরিদপুর ও নাকাই ইউনিয়নের মেঘারচর, বালাবামুনিয়া, পুরানদার, পাটোয়াসহ আশপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ এই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করে।
গ্রামটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির উঠোনে মাচায় বই, খাতা ও ব্যাগ শুকোতে দেয়া হয়েছে।
বাঁশের সাঁকোটি পার হয়ে প্রতিদিন মেঘারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাবামুনিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্র্যাক গণশিক্ষা কেন্দ্র, ফকিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ফকিরহাট শহীদ খায়রুল আলম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আল্লাহর দরগা ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসা, ফকিরহাট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ, ফকিরহাট মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করে।

মেঘারচর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম (৩৪) বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় গত চার মাসে আমার মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা বাঁশের সাঁকো থেকে নদীতে পড়ে যায়। পরে তার চিৎকারে সামনের বাড়ির লোক এসে তাকে নদী থেকে তোলে। সেদিন করে আর তার বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে আমার মেয়েকে নদী পার করে দিতে হয়। বিদ্যালয় ছুটির সময় নদীর পাড়ে এসে বসে থাকতে হয়।
ফকিরহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আহসান হাবিব জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ভয়ে ভয়ে সাঁকোটি পার হতে হয়। ছোট ছাত্র-ছাত্রীরা পারাপারের সময় নদীতে পরে গিয়ে বই, খাতা ও পোশাক ভিজে যায়। পরে সেদিন আর তাদের স্কুলে যাওয়া হয় না।
বালাবামুনিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, নদীর ওপার থেকে প্রতিদিন দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীকে সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। পারাপারে ঝুঁকির কারণে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি কমে গেছে। এ ছাড়া বর্ষাকালে নদীতে পানি বেশি হওয়ায় উপস্থিতি কমে যায়। সে সময় মাত্র দুই-তিনজন ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে আসে। তাই ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ জরুরি।
মেঘারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল গোফফার বলেন, সাঁকোতে পারাপারের সময় ছাত্র-ছাত্রীরা যেদিন নদীতে পড়ে যায় সেদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিতি অনেকটা কমে যায়। তাই অনতিবিলম্বে ওই গ্রামে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।
নাকাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, মেঘারচর গ্রামে নলেয়া নদীর উপর সেতু না থাকায় স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। ওখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম বলেন, মেঘারচর গ্রামের সাঁকোর স্থানে সেঁতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Tags: