muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

১০০ উপসচিব সুদমুক্ত গাড়ি-ঋণ পাচ্ছেন, ক্ষোভ অন্য ক্যাডারদের

ডেস্ক রিপোর্ট।। আরো ১০০ উপসচিব (ডিএস) প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ঋণ পাচ্ছেন। এজন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বিসিএসের ২৬টি ক্যাডার সার্ভিসের ডিএস পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বৈষম্যে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সূত্র জানায়, এর আগে ১২৩ জন উপসচিব গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া ১২৫ জন উপসচিব সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা ভোগ করছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গাড়ি কেনার সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে,  সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের যুগ্ম প্রধান বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাবেন। তবে উল্লিখিত পদসমূহে চুক্তিতে বা প্রেষণে নিয়োজিতরা এ সুবিধা পাবেন না। গাড়ির ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে চাকরির মেয়াদ অবশ্যই এক বছর থাকতে হবে। সমস্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গাড়ির মালিক হবেন। সর্বোচ্চ ১২০ কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ১৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিসিএস সমন্বয় কমিটির মহাসচিব ফিরোজ খান বলেন, সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সুবিধার জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতেই পারে। এ নিয়ে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তবে সেটা অবশ্যই ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে। কাউকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে আর অন্যরা বঞ্চিত হবে, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারি নীতিমালাবিরুদ্ধ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা বহুদিন ধরে প্রশাসন ক্যাডারের মতো অন্য ক্যাডারদেরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। এতদিন যুগ্ম সচিব পর্যন্ত গাড়ি সুবিধা পেয়ে আসছিল। সম্প্রতি আইন পরিবর্তন করে তা ডিএস পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকেই  নতুন নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে।

বিসিএস সমন্বয় কমিটির মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষে  একসঙ্গে সবাইকে এ সুযোগ দেওয়া সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারত। কিন্তু সেটা করা হয়নি। নতুন নীতিমালায় আমাদের ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। তাদের প্রাধিকারভূক্ত করা হয়নি।

তিনি বলেন, একই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা তিন বছর চাকরি করে যুগ্ম সচিব হচ্ছেন আর অন্যরা বছরের পর বছর একই পদে কাজ করছেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সব জানেন, বোঝেন। কিন্তু এসব বিষয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে সব করা হচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সেটিও এখনো হয়ে উঠেনি।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম খাতে বরাদ্দকৃত টাকার অতিরিক্ত ৪৬১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করা হয়। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী সরকারে প্রাধিকারপ্রাপ্ত তালিকায় বর্তমানে ১ হাজার ৫৩৯ জন উপসচিব আছেন। প্রতিজনকে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হলে সরকারের উল্লিখিত পরিমাণ টাকার প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের বাজেটে এ খাতে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যা ইতোমধ্যে ১২৩ জন উপসচিবের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে ১২৫ জন উপসচিবকে সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা প্রদানের নতুন সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিপুল আর্থিক সংশ্লেষ (৪০০ কোটি টাকা) জড়িত বিধায় পর্যায়ক্রমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী অর্থমন্ত্রীর জন্য তৈরি এক সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, সরকারে উপসচিব পদমর্যাদার ১০০ জন কর্মকর্তাকে সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়িসেবা নগদায়নের জন্য ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ লাখ টাকা করে ৩০ কোটি টাকা (১০০*৩০ লাখ) অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয ব্যবস্থাপনা খাত থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করা যেতে পারে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের সময় মন্ত্রণালয়ের বাজেট সিলিং অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে মর্মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানানো যেতে পারে।

ভারপ্রাপ্ত সচিবকে অর্থমন্ত্রী এক নোটে বলেন, ‘প্রয়োজন ৪৬১ কোটি টাকার। সেখানে ৩০ কোটি বরাদ্দ খুবই কম। আলোচনা করুন।’

উত্তরে অর্থ সচিব বলেন, এ মুহূর্তে উপসচিবের মোট সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৯ জন। সব উপসচিব গাড়ির সুদমুক্ত অগ্রিম গ্রহণ করলে মোট বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন হবে ৪৬১ কোটি টাকা। সব উপসচিব এ সুবিধার আওতায় অগ্রিম গ্রহণ করবেন কি না নিশ্চিত নয়। তারপরও বাজেটে এ খাতে অর্থসংস্থান করতে হবে পর্যায়ক্রমে।

তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে ইতোমধ্যে ১২৩ জন উপসচিব এ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এখন আরো ১০০ জন উপসচিবের জন্য ৩০ কোটি টাকা এ খাতে অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা করতে বরাদ্দ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয়ের বাজেট সিলিং এর আওতায় পর্যাক্রমে আরো উপসচিবকে এ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, অর্থ সচিব তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীকে উপসচিবদের অগ্রিম গাড়ি-ঋণ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী রোববার এক নোটে লেখেন, ‘ব্যাখ্যাটি প্রয়োজনীয় ছিল।’ তিনি ৩০ কেটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেন।

Tags: