muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় পোপ ফ্রান্সিস

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের পৌরহিত্যে মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক সম্পন্ন হলো রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

পোপ ফ্রান্সিস এই মুক্ত উপাসনায় বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করেন।যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন তিনি।

শুক্রবার সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয় পোপের আগমন উপলক্ষে। সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন ভোর ছয়টা থেকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরাও প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে উদ্যানে আসেন।

সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পোপ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয় উপাসনা অনুষ্ঠান। ঈশ্বর বন্দনায় ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান…, একসঙ্গে দলে দলে হয়ে এক প্রাণ…,’ প্রার্থনা সংগীতে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান।

উপাসনা সংগীতের মধ্যেই ১০টায় মঞ্চে ওঠেন পোপ ফ্রান্সিস। ষোল জন ‘ঈশ্বরসেবককে’ যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করার আগে উপসনায় আগতদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পোপ। স্প্যানিশ ভাষায় দেওয়া তার বক্তব্য বাংলায় তর্জমা করে শোনানো হয়।

খ্রিস্টীয় চার্চের এই প্রধান পুরোহিত বলেন, ‘প্রিয়জনেরা, আজকের এই শুভ দিনে, যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই এসেছেন,  আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আপনারা অনেকে অনেক  দূর থেকে এসেছেন, অনেকে দুই দিনের যাত্রাপথ অতিক্রম করে এখানে এসেছেন, আপনাদের এ উদারতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন, ‘এটা প্রকাশ করে মঙ্গলের জন্য আপনাদের সকলের অন্তরে অনেক ভালবাসা রয়েছে। এটা প্রকাশ করে যিশু খ্রিস্টের জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালবাসা রয়েছে।’

পোপ বাংলাদেশে যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এভাবে সামনের পথে এগিয়ে যান, পর্বতের উপর যিশুর অস্টকল্যাণ বাণীর আলোকে, সেই প্রেরণা নিয়ে। আজকে সবার কাছে আমার বিশেষ আহ্বান, এই নব অভিষিক্ত যাজকদের জন্য প্রার্থনা করতে।’
এর আগে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বিকালে মিয়ানমার ঢাকা পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বিমানবন্দর থেকে সাভারে গিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোপ। পরে ধানমণ্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বঙ্গভবনে যান পোপ, সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের পর ঢাকায় ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

বিকেলে কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করবেন পোপ। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় অংশ নেবেন।

সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন।

বিকাল ৫টায় ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটিরও প্রধান।

গত ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো পোপের এটাই প্রথম সফরে। সর্বশেষ সফর করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল, ১৯৮৬ সালে।

Tags: