muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

প্রচ্ছদ

অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা কিভাবে দেখবেন?

ডেস্ক রিপোর্ট ।। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে যাবতীয় শঙ্কা ও প্রশ্নের অবসান হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জানতে এখন আর মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ অনলাইনেই মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেখতে পারবেন। নিতে পারবেন তালিকার প্রিন্টও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে যেকোনো নিয়োগ কিংবা ভর্তিসংক্রান্ত কাজেও মুক্তিযোদ্ধোদের প্রকৃত তালিকা দেখতে সমস্যা হবে না। এতে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপতৎপরতা বন্ধ হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সব তথ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে মোট ২৫টি বিভাগে এসব তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। বিভাগগুলো হলো : মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, বেসামরিক গেজেট, সাময়িক সনদ, শহিদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহিদ গেজেট, শহিদ বিজিবি গেজেট, শহিদ পুলিশ গেজেট, যুদ্ধাহত গেজেট, খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট, মুজিবনগর গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গেজেট, বিসিএস গেজেট, সেনাবাহিনী গেজেট, বিমানবাহিনী গেজেট, নৌবাহিনী গেজেট, নৌ-কমান্ডো গেজেট, বিজিবি গেজেট, পুলিশ বাহিনী গেজেট, আনসার বাহিনী গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা গেজেট, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট ও লাল মুক্তিবার্তা।

এর আগে গতকাল রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব তথ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণাল‌য়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এখন বি‌শ্বের যে‌কোনো প্রান্ত থেকে একজন মু‌ক্তি‌যোদ্ধা তার তথ্য দেখ‌তে পারবেন। আর কষ্ট করে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার প্র‌য়োজন হ‌বে না।

যেভাবে দেখবেন তালিকা : প্রথমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.molwa.gov.bd) গিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান’ পেজে যেতে হবে। এজন্য আপনাকে হোমপেজের ‘মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা’ অপশন থেকে যেকোনো একটি বিভাগ বেছে নিতে হবে।

ওয়েবসাইটে মোট ২৫টি বিভাগ দেওয়া আছে। ‘তালিকা নির্বাচন করুন’ অপশন থেকে গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভাগ নির্বাচন করুন, তারপর ব্যক্তির ক্ষেত্রে গেজেট নম্বর লিখুন (এটি অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হবে) অথবা নিজ নাম ও পিতার নাম লিখুন এবং নিজ জেলা শনাক্তক্রমে ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করুন। তবে সনদ নম্বর লেখার প্রয়োজন নেই।

আর উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধার নাম জানতে চাইলে নিজ জেলা ও উপজেলা নির্বাচন করে ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করুন। প্রিন্ট করতে চাইলে ‘প্রিন্ট’ বাটনে ক্লিক করুন। মুক্তিযোদ্ধার দলিলও প্রিন্ট করতে পারবেন।

অনলাইনে তালিকা প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা করার জন্য সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। আদালতের আদেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এপ্রিলের শুরুতে এই স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এর ফলে যাবতীয় বিতর্কেরও অবসান হলো। তবে যেহেতু তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে, এতে আরো সংখ্যা যোগ করা হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে এ পর্যন্ত পাঁচটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এসব তালিকায় অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধার নামও ছিল। ইতোমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অতীতের সরকারগুলো নিজেদের সুবিধার্থে বা ইচ্ছামতো মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এক্ষেত্রে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম যেমন বাদ পড়েছে, তেমনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তালিকায়।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেক্টর কমান্ডার ও সাবসেক্টর কমান্ডারদের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ জন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত সেক্টরসমূহ বিলুপ্তির পর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইবি আরসিতে স্থানান্তরিত দলিলে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন। এক্ষেত্রে আগের তালিকার বাকি মুক্তিযোদ্ধার হদিস পাওয়া যায়নি। এটিই পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেটি ‘ভারতীয় তালিকা’ নামে পরিচিত।

১৯৭৮ সালের পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির কাজে হাত দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদকে এ দায়িত্ব দেন তিনি। ১৯৮৬ সালে এরশাদের শাসনামলে ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে এ তালিকা গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়নি।

১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ৮৬ হাজার।

১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয় ১ লাখ ৮২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন ডিজির নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা কমান্ডারদের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে তৈরি করা তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে সংরক্ষণ করা হয়। এটিই এখন ‘লাল বই’ নামে পরিচিত। এতে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে।

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সে সময়ে আগের নীতি বাদ দিয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বাদ রেখে ইউএনও ও ডিসিদের নিয়ে উপজেলা ও জেলায় যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। আগের যেকোনো দুটি তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদেরই সুপারিশ করে কমিটি।

এ সুপারিশের আলোকেই ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার দুটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর একটি ছিল বিশেষ গেজেট, যেখানে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার এবং অপর গেজেটে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার। দুটি মিলে তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার জনে। তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৪ হাজার বেড়ে যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ৪৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া বলে অভিযোগ তোলা হয়। অবশ্য মহাজোট সরকারও ক্ষমতায় এসে বিএনপির নীতিমালা মেনে ১১ হাজার ৫০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেয়। ফলে বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ষষ্ঠবারের মতো উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগেই একাত্তরের বীর সেনানীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ঘোষণা আসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে।

Tags: