muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সব উপ-কমিটি বাতিল করার ঘোষণা

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা। তাদের তোপের মুখে সব উপ-কমিটি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ের সামনে পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের তোপের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতা।

প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়া নেতারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।

রোবরার সন্ধ্যায় প্রথমে প্রাক্তন নেতাদের তোপের মুখে পড়েন এনামুল হক শামীম। এ সময় প্রাক্তন ছাত্রনেতারা বিভিন্ন ক্ষোভের কথা বলতে থাকেন। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটিতে জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশকারীদের কোনো জায়গা হবে না। এদের কারা ঢুকিয়েছে? বিরোধী দলে থাকাকালে আমরা বিএনপি-জামায়াতের হুলিয়া মাথায় নিয়ে রাজনীতি করেছি, জেল খেটেছি। আমার বাড়িতে পুলিশ যাওয়াতে আমার পিতা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। আমরা রাজনীতি করেছি। আর এখন কমিটিতে কাউয়া হাইব্রিডরা নেতা হয়েছে। আমরা মরলে আওয়ামী লীগের হাতে মরতে চাই। বিএনপি-জামায়াতের হাতে নয়।

এর কিছুক্ষণ পরে সুজিত রায় নন্দী কার্যালয়ের সামনে আসেন। তাকেও পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতারা ঘিরে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এ সময় সুজিত রায় বলেন, কমিটিতে কোনো কাউয়া হাইব্রিডের জায়গা হবে না।

এরপর ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে কার্যালয়ের সামনে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি গাড়ি থেকে নামলে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতারা গতকালের মতো ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন। এসময় আবু আব্বাস নামে এক নেতা কথা বলা শুরু করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আব্বাস, আমি তো গতকালকেই সব বলেছি। আবার কেন? এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে আবু আব্বাস বলেন, স্যার, আমরা কি রাজনীতি করিনি? আমাদের তো কমিটিতে নাম নাই। আমরা তো আপনার কাছে বলতেই এসেছি। উপ-কমিটি নিয় ফেসবুকে সমালোচনা করার জন্য আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এর জবাবে ওবায়দুর কাদের বলেন, কই আমাকে তো বলনি। আমি তোমার সব দায়িত্ব নিলাম। এ কথা বলে তিনি সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ফিরে এসে আব্বাসসহ অন্যদের উদ্দেশে কিছু বলতে শুরু করেন। এ সময় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এরপর ওবায়দুল কাদের সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তিনি সভাকক্ষে বসে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাদের অভিমান, অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শোনেন। বিক্ষুব্ধ সবার কথা শুনে ওবায়দুল কাদের সকল উপ-কমিটি অবৈধ বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এগুলো কোনো কমিটি না। এগুলো খসড়া করা হচ্ছিল। এখন নতুন করে যাচাই-বাছাই করে উপ-কমিটি ঘোষণা করা হবে। একটি কমিটিতেও আমার স্বাক্ষর নাই। তোমরা বোঝ না, এগুলো সব অবৈধ?

তাহলে এসব কমিটি ফাঁস করলো কে? এমন প্রশ্নও তোলেন ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে করতে কার্যালয় ত্যাগ করেন।

গতকাল শনিবারও দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের পাশে নির্বাচনী অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় পদবঞ্চিত নেতাদের। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের জন্য ছাত্রলীগের প্রাক্তন দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন রুপক ও সভাপতির কার্যালয়ের স্টাফ সাঈদ আহমেদকে দায়িত্ব দেন।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে পাঁচজন করে সহ-সম্পাদক থাকার নিয়ম আছে। তবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো বিভাগভিত্তিক নয়। তাই এ পদগুলোর বিপরীতে কোনো সহ-সম্পাদক থাকবে না। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাদ দিলে পদ দাঁড়ায় ১৯টি।

সহ-সম্পাদকের ব্যাপারে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তিনিই বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, এটা বলেন না। এই সহ-সম্পাদকের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অনেকে নিজ জেলায় অনেক হুমকি-ধামকিও মারে। তাই আগামী সম্মেলনে সহ-সম্পাদকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।’

দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়ে গত ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০০ করার যে বিধান রয়েছে, আমরা তার বাইরে যাব না। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’

গত বছরের ৩০ জুন সভাপতির কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তো পুরনোদের চিনি। এবার নতুনদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখানে আমাদের একটা ক্যাটাগরি আছে। যারা অন্যান্য শাখা বা কমিটিতে আছেন তারা কিন্তু উপ-কমিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থাকতে পারবেন না। কিন্তু মেম্বার (কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য) থাকতে পারবেন। যারা অন্য কমিটিতে আছেন, এমন কেউ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (সহ-সম্পাদক) হতে পারবেন না। এই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ১০০ অতিক্রম করবে না, সর্বমোট ৯৫ জনের মতো হবে।’

সহ-সম্পাদকদের দায়িত্ববণ্টনের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে তিনজন করে সহ-সম্পাদক সংযুক্ত থাকবেন। এ বিষয়ে আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রচার এবং দপ্তর- এই দুটি বিভাগে পাঁচজন করে থাকবেন। তথ্য-গবেষণায় চারজন থাকবেন। এভাবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। এরই আলোকে আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। হয়তো সেক্ষেত্রে আরো একটি মিটিং করে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করব।

সম্পাদকীয় উপ-কমিটির সদস্যদের সীমা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপ-কমিটির সদস্য পদে ২০ থেকে ৩০ জন থাকবেন। এখানে পার্লামেন্টের মেম্বাররা থাকবেন পাঁচ থেকে সাতজন। অনেক আছে আওয়ামী লীগমনস্ক, আমাদের আদর্শের লোক; তারাও স্থান পাবেন। আর ১৯টি উপ-কমিটির মধ্যে ১৬টি উপ-কমিটিতে তিনজন করে সহ-সম্পাদক থাকবে।

Tags: