muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

ইসলামের কথা

বাংলা ভাষার প্রেরণায় অমর ২১শে

জহিরুল ইসলাম আব্দুল্লাহ।। আমরা বাঙালি।আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি। আমরাই প্রথম জাতি। যারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রক্ত দিয়েছেন রাজপথে।মাতৃভাষার জন্য রক্ত এবং জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। ড. মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহর মতে,বর্তমান বিশ্বে ভাষার সংখ্যা ২৭৯৬ টি। তার মধ্যে বাংলা অন্যতম। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মধ্যে বাংলার স্হান ৪র্থ। কারো মতে৭ম। ১২০৩ সালে তুর্কিবীর ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, রোজ- বৃহস্পতিবার মাতৃভাষা মর্যাদা রক্ষায় অনেকেজীবন দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রফিক,সালাম,জব্বার,শফিক,বরকতসহ আরও নাম না জানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের স্মৃতিকে অমর রাখতে ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি করে সমবেত হয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ভাষা শহিদগণকে স্মরণ করা হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আমাদের দেশে জাতীয় মর্যাদায় পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে কানাডায় বসবাসরত দুজন বাঙালি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। তাঁরাই ১৯৯৮ সালে ৯ই জানুয়ারি ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদন পত্র পাঠান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়।অতঃপর ১৯৯৯ সালের ১৭নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্হা ইউনেস্কোর ৩১ তম প্যারিস অধিবেশনে২৮ টি দেশের সমর্থনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় ২০০০ সালে। আর জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১৮৮ টি দেশে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য উপলব্ধি করে ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ বলেন আমি মুগ্ধ,আমি প্রীত,আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে! আমার হৃদয়ে স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই আমি গর্বিত। সত্যিই আমরা গর্বিত আমাদের মাতৃভাষার জন্য। যুগে যুগে আসা সব নবী- রাসূলকে পাঠানো হয়েছে স্বজাতির ভাষা ভাষী করে।তারা তাদের জাতিকে মাতৃভাষার মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত প্রদান করেছেন।

এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোনো নবী- রাসূলকে তার মাতৃভাষা ছাড়া পাঠাননি। ( আহমদ হাদিস নং:২০৪৪)। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়তী(র) তাঁর “ইতকান ফি উলুমিল কুরআন” গ্রন্হে বলেন- আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবীকে যেমন তাদের স্বজাতির ভাষা ভাষী করে প্রেরণ করেছেন। তেমনি ভাবে সংশ্লিষ্ট জাতির মাতৃভাষায় কিতাব ও প্রদান করেছেন। একুশের মহান চেতনা আমাদের জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটিয়ছে।আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলে রয়েছে একুশের চেতনার প্রতিভা। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে মূলত স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু। একুশের চেতনার যে বীজ সেদিন বপন করা হয়েছিল তার বিশাল ফলাফল পরবর্তীতে অমূল্য স্বাধীনতার স্নিগ্ধ ছায়ায় বেড়ে উঠেছিল। ফলে আজ আমরা স্বাধীন, আমরা মুক্ত, আমাদের ভাষাও বাঙ্গলা।

লেখক:- শিক্ষার্থী, (বিএ অনার্স) আল কোরআন এণ্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, হয়বতনগর আলীয়া মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ।

Tags: