muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

মুক্তিযোদ্ধার কথা

মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম হয়ে বলছি, কোটা প্রথা আমাদের দয়া নয়, বরং অধিকার

মোঃউমর ফারুক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।। ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের আত্বসম্রমের বিনিময়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীন বাংলাদেশ। সেদিন দেশ পাকিস্তানীদের হাতে ছিল, তাদের রীতিমত প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল কিছু মধ্যই বাঙ্গালীদের উপর ছিল বাধ্যবাদকতা ও বৈষম্যর স্বীকার ।আমরা জন্ম সূত্রে একটি স্বাধীন,সার্বভৌম রাষ্ট পেয়েছি কাদের ত্যাগের বিনিময়ে জানেন তারা কারা? তারা এদেশের সূর্যসন্তান, আমরা কি করছি তাদের বিরুদ্ধে একবার চিন্তা করেছেন? এত কষ্ট করে লাখো প্রাণ দিয়ে স্বাধীন দেশ করে কি লাভ হলো। সমসাময়িক সকল কাজে মুক্তিযোদ্ধা ও তার প্রজন্মকে নানা দৃষ্টিকোন থেকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে,কেন কেন কেন?

তারা নিজেকে অপমানিত হওয়ার জন্যই দেশ পাকিস্তানি হাত থেকে রক্ষা করেছিল কি?পরিবার মা,বাবা,পরিজন, নববধূ ঘরে রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে কেন? ছি ছি ছি, আমি ধিক্কার জানাই তাদের যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এখনও সম্মান করতে শিখেনি।

যুদ্ধ পরর্বতী সময়ে দেশ নাজেহাল অবস্থায় পরিণত ছিল, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন মুক্তিযোদ্ধা দের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন ।মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার কতটা দূর্দশাগ্রস্থ ছিল সেসময় ভিডিও ফুটেজ কিংবা মুক্তিযোদ্ধা কাছ থেকে সেসব তথ্য জানতে পারি।১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও অনগ্রসরদের সহযোগীতার জন্য মুজিব সরকার কোটা প্রথা চালু করেছিল। যাতে করে মুক্তিযোদ্ধা সংকটময় অবস্থা থেকে উঠে আসতে পারে।১৯৭৫ সাল পরর্বতী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যু পরে স্বৈরসরকার মুক্তিযোদ্ধা দের কোটা প্রথা তুলে দেয়। এতে করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নানা সংকটপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হন।তারা দেশের কর্ণধার হয়েও নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।নব্বই দশকে স্বৈরশাসন শেষ হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সহযোগিতা মূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার জয় লাভ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা এসে প্রথমেই মুক্তিযোদ্ধা পক্ষে এসে দাঁড়ান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার উদ্দ্যোগ নেন।তিনি মুক্তিযোদ্ধা সহযোগিতা করার জন্য মুক্তিভাতা চালু করেন। এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেন, যাতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মরা অনগ্রসর অবস্থা থেকে উঠে আসতে পারে। কিন্তু পরর্বতী খাদেলা জিয়া ও ফখরউদ্দিন শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও সকল সুযোগসুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।২০০৮ সালে নির্বাচন মহাজোট সরকার আবার ক্ষমতা এসে মুক্তিযোদ্ধা পক্ষে এসে দাড়াঁন এবং সরকারী চাকুরী কোটা প্রথা পুনরায় চালু করেন। কিন্তু সমসাময়িক একদল কুচ্ক্রীমহল সরকারের মুক্তিযোদ্ধা চেতনায় দেশ শাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে তীব্র বিরোধিতা করছে।বর্তমান সরকার সরকারী চাকুরী ব্যবস্থা অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কে তুলে আনতে ৫৬% কোটা প্রথা চালু করেছে।

যেমন, মুক্তিযোদ্ধা ৩০%, নারী ১০%,জেলা ১০% উপজাতী ৫% ও প্রতিবন্ধি ১% মোট ৫৬%। কিন্তু সরকারী চাকুরী সাধারণদের ৪৪% নিয়োগ দেওয়ায় নানা প্রকার সমস্যা ও বেকারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার দরুণ বর্তমান প্রজন্ম ও সাধারন শিক্ষার্থীরা কোটা প্রতিবাদে নানা কার্যক্রম পরিচালিত করছে।তারা বলে কোটাধারীদের জন্য দেশ একেবারে মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে।সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে মেধাবীরা যথাযথ মূল্যয়ন পাচ্ছেনা। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও প্রজন্মদের নানা ভাবে অপমান অপদস্ত করা হচ্ছে, তারা বলে যারা কোটাধারী তারা একদম মেধাহীন। আপনাদের থেকে একটু সুবিধা বেশী পায় বলে তাদের মেধাহীন বলেন? বাহ! জাতি আপনাদের কাছ থেকে এরকম কিছুই আশা করে তাইনা? মুক্তিযোদ্ধারা কি কোটা জন্য দেশ স্বাধীন করছে?সকল কার্যক্রমে সাধারণরা বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদের অপমান করছে এবং দেখছে অন্য চোখে কেন? আমরা কি করেছি? এটা কি আমরা চেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কখনও কোটা জন্য জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেনি। চেয়েছেন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট।বাংলাদেশ সরকার সাংবিধানিক ভাবে প্রধান করেছে।এটা আমাদের দয়া নয় বরং অধিকার।

বিভিন্ন সরকারী পরীক্ষা গুলোতে কোটাধারীদের সাধারণদের মতই পাশ করতে হয়,যেমন বি সি এস পরীক্ষা প্রিলিমিনারি, লিখিত,ও ভাইভা কোটা দিয়ে নয় মেধা দিয়ে পাশ করতে হয়।তারপর তার কোটার মূল্যায়ন করা হয়।একজন পরিক্ষার্থী যদি বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত, ও ভাইবা পাশ করতে পারে সে অবশ্যই মেধাবী, তাকে মেধাহীন বলার কোন সুযোগ নেই।কিন্তু বর্তমানে একদল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে ভুলন্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।তারা নাকি বলে যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে তারা এ প্রজন্মের রাজাকার! আমাদের প্রজন্ম নাকি রাজাকার?? তারা ঝাটাঁ নিয়ে আন্দোলন করছে, সার্টিফিকেট ধুঁয়ে আন্দোলন করছে কোটা বাতিল করার জন্য এসব কি? আপনারা বলছেন নাতি-নাতনি কোটা কেন? আপনি গণনা করে দেখুন কতজন শিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আছে। বেশীভাগই মূর্খ, এবং বয়স বেশী। তাহলে তারা কিভাবে চাকুরী ক্ষেত্রে সুযোগ পাবে। ১৯৭৫-৯৬ সাল পর্যন্ত কোন কোটা ব্যবস্থা চালু ছিলনা,কেউ তো আন্দোলন করেনি,যে তাদের কোটা প্রয়োজন।যদি সেসময়ে কোটা প্রথা চালু থাকত তাহলে এতদিন এ কোটা প্রয়োজন ছিলনা।

গত ৮ এপ্রিল দেশ ব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা,অসহযোগ আন্দোলনে নেমেছে রাস্তাঘাট অবরোধ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপার্চাযের বাসায় অতর্কিত হামলা এসব কে করেছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা? হ্যা আমরাও আপনাদের বিপক্ষ শক্তি নই, আমরাও চাই কোটা সংস্কার হোক। আপনাদের সাথে আমরাও আছি তাহলে কেন সমসাময়িক পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধা কোটা পক্ষদের নানা ভাবে অপমান ও হেয়পতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন? কেন বলছেন কোটাধারীরা মেধাহীন? যুক্তি দেখান?

মুক্তিযোদ্ধারা কি দেশ স্বাধীন করে ছিল অপমানিত হওয়ার জন্য। না আমরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম হয়ে ভুল করেছি।লজ্জা লাগেনা আপনাদের, জিজ্ঞাসা করুন আপনাদের পূর্বপুরুষদের মুক্তিযুদ্ধ সময় জয়বাংলা শ্লোগানে যখন উত্তাল পূর্ববাংলা তখন কোথায় ছিল আপনাদের বাবা,নানা,দাদা চাচা,মামা? কেন যায়নি বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতাযুদ্ধে। নাকি তারা দেশ স্বাধীন হয় সেটা চায়নি,নাকি ভয় পেয়ে লুকিয়ে ছিল,দুদিক থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য।মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম”
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

সে সময় আমাদের পূর্বপুরুষ ঘরে হাতগুটিয়ে বসে থাকেনি,দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয় নিয়ে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। আমরা সুবিধা পাবোনা তাহলে কি রাজাকার উত্তরসূরিরা পাবে।

বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় দেশ শাসন করছে, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব নিয়েছেন কারণ ১৯৭১ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।বিগত সরকার মুক্তিযোদ্ধা পক্ষে কোন প্রকার সহযোগীতা মূলক কাজ করেনি।যারা দেশের কর্ণধার, দেশের সূর্যসন্তান তাদের রেখে কিভাবে দেশ উন্নত হতে পারে।

এখন আপনারা জেগে উঠেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। সঠিক ভাবে ভেবে দেখুন কি ভাবে দেশের কর্ণধারদের সম্মান প্রদর্শন করছেন।তারা এর থেকে বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। মুক্তিযোদ্ধা বিরুদ্ধ কিছু বলবেননা।আসুন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা না করে স্বাধীনতার চেতনার একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

Tags: