ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ।। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আদমপুরে চাঞ্চল্যকর কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনার সাতদিন পর অভিযুক্ত ছয় ধর্ষকই ধরা পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য দেয়।
এদিকে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের খবরে অষ্টগ্রামের জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নির্যাতনের শিকার হতদরিদ্র মেয়েটির মা ও বাবা জানান, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করায় তাঁরা খুব খুশি হয়েছেন। তবে ধর্ষকদের বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্প অফিসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোপনে খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী কালীবাড়ী এলাকার দয়ারবাজার থেকে ছয় ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান এবং স্কোয়াড কমান্ডার এডি চন্দন দেবনাথের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
গ্রেপ্তার ছয়জন হচ্ছে অষ্টগ্রামের আদমপুর ইউনিয়নের বরাগীরকান্দি গ্রামের শামছু মিয়া ছেলে হযরত আলী (২০), মৃত উছমান মিয়ার ছেলে আসাদ মিয়া (২০), আজিজ মিয়ার ছেলে সুশেন মিয়া (১৯), শাহাবুদ্দিনের ছেলে এমদাদুল মিয়া (১৭), সুজি মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়া (২৩) ও মৃত আসমত আলী মিয়ার ছেলে জাহের মিয়া (২৭)।
সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, ধর্ষণ মামলার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, নির্যাতিত কিশোরী তার বড় ভাইয়ের সাথে চট্টগ্রামে বসবাস করত। ঘটনার এক মাস আগে সে তার গ্রামের বাড়ি অষ্টগ্রামে চলে আসে। ধর্ষণের ঘটনার পাঁচ-ছয়দিন আগে প্রধান আসামি হযরত আলী মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি সাড়া না দিলে হযরত আলী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তার সহযোগীদের নিয়ে বাড়ি থেকে মেয়েটিকে তুলে নেয়। পরে সবাই তার ওপর পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালায়।
র্যাব সূত্র আরো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধীরা র্যাবকে জানায়, ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে তারা সবাই প্রথমে ঢাকায় পালিয়ে যায়। পরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তে আত্মগোপন করে। তারা ধরা পড়লে কেউ একা নয়; সবাই একসঙ্গেই ধরা পড়বে বলেও সিদ্ধান্ত নেয় । বিশেষ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে গতকাল (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ছয় ধর্ষককে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অষ্টগ্রাম থানার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে র্যাব।
পুলিশ, ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে স্থানীয় ছয় ধর্ষক। ঘটনার পরদিন ১৩ এপ্রিল মেয়েটিকে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ এপ্রিল মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেয়েটির মা বাদী হয়ে অষ্টগ্রাম থানায় ছয় ধর্ষককে আসামি করে ১৪ এপ্রিল ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরো দুজনসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস জানান, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে র্যাব একটি ভালো কাজ করেছে। তারা এজন্য ধন্যবাদ পাবেন। কিন্তু পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।