muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

প্রচ্ছদ

পুঁজিবাদ ও শ্রমের অবমূল্যায়ন

ফিচার ।।                                                    আমি যে শ্রমিকওয়ালা
                                  বরাবর পাগলা ঘোড়া
             দিন কি এমনি যাবে?
                                      বলি কি ও সুখ
              তুমি কি আমার হবে???
বলছিলাম শ্রমজীবী মানুষের কথা।হাতুড়ি পেটার শব্দ, সেলাই মেশিনের খটখট আওয়াজ,রিক্সার পেঢেল মারার শব্দের সাথে সাথে মিশে যায় ওদের ক্লান্ত দেহ আমাদের দৃষ্টির অগোচরে।শ্রমিকের রক্ত চুষে খায় হায়নার দল।মানুষ রুপি জোঁক। সস্তা শ্রম,নির্যাতন অবহেলা,নিপীড়ন, বিশ্বাস ঘাতকতা তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠে অস্ত যায়,বাগানে ফুল ফুটে,নদীতে জোয়ার আসে ভাঁটা হয়,শুধু অবস্থার পরিবর্তন হয় না এ খেটে খাওয়া মানুষদের।ওরা একবেলা না খেয়ে অন্য বেলার খাবারের পিছু ছুটে।ওরা যে খাবার খুজে হন্য বিত্তবানরা তা জমিয়ে রেখে ধন্য।ওরা পথ বানিয়ে দেয় আর আমরা সে পথে চলি।তবু আমরা করি না ওদের গন্য।আজীবন হাতুড়ি, শাবল,করাত চালিয়েও ওদের বরাত ফেরে নি।হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরও ওদের ঘরে অন্য থাকে না,বাতিতে তেল থাকে না,পরনের জামা থাকে না।ওরা সম্মান পায় না,পায়না ন্যায্য মুজুরি।
কাল মে দিবস যা পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এ দিনটি পালিত হয় না। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এ দিনটি সরকারী ছুটির দিন।১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবীতে জমায়েত হয়।তখন তাদের ঘিরে থাকা পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।এতে প্রায় ১০-১২ জন পুলিশ ও শ্রমিক নিহত হয়।এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৮৯, ১৮৯০,১৮৯১, ১৮৯৪,১৯০৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন হয়।১৯২৩ সালের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশে মে দিবস পালিত হচ্ছে।
কারা এ আন্দোলনকারী? তারা হলো বাংলার কৃষক,কুলি,মজুর,কলকারখানার শ্রমিক,বাসের ড্রাইভার,রিক্সাচালক বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের প্রতি অন্যায় আর বৈষম্যের চিত্র হয় এমন………
কৃষক : সারাদিন রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে অন্যের জমি চাষ করে।উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পায় সে।খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার।নিজের হাতে জন্মানো ফসল অন্যের ঘরে তুলে দেয় সে।এর জন্য পায় না সে বাড়তি কোন পারিশ্রমিক।
কুলি : যে বোঝা বহন করতে আমাদের প্রান চলে যাওয়ার মত অবস্থা সে বোঝা সে বহন করে।মাথায় করে মালামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।ঘামে ভিজা শরির, ক্লান্ত মুখের দিকে না তাকিয়ে সামান্য টাকা দিয়ে দেই আমরা।একবারও ভাবি না ওদের কষ্ট টা।
কারখানার শ্রমিক : এরা মুলত গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। যাদের জীবনমান শূন্যের কোঠায়।ওরা বসতিতে বসবাস করে।সারাদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় কাজ করে।মালিক শ্রেণি এতে লাভবান হলেও ওরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত। ওদের দ্বারা অর্জিত মোটা টাকার অংশ যায় মালিকের পকেটে আর ওরা পায় যৎসামান্য।
রিক্সাচালক : প্রচন্ড রোদ,কনকনে শীতে তাকে ছুটে চলতে হয়।প্রতিটা দিন কাটে কষ্টের মাঝে।আমাদের গন্তব্যস্থান থাকলেও তার নেই কোন গন্তব্যস্থান। সে নরম বিছানায় শুয়ে রাত্রিযাপন করতে পারে না।থামে না তার পায়ের গতি।এত কষ্টের পরেও সে পায় না ভালো ব্যবহার, যথাযথ পারিশ্রমিক।
শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।তাজরীন অগ্নিকান্ড বা রানা প্লাজা ট্রাজেডি যেন আর না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।প্রতিদিন কোন না কোন কাজে মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে কারখানায়।এসব আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।শ্রম আদালতের কাজের অগ্রগতি বাড়াতে হবে। কোন শ্রমিক যেন নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যায় না ভোগে তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকের পন্যের দাম বাড়াতে হবে। কুলি,  মজুর, রিক্সাচালক সবাইকে কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে হবে।
আজকের এ সভ্যতা শ্রমিকদের দান।ওদের অবদান না থাকলে দেশ অচল হয়ে যেত।আমাদের মুখের হাসির জন্য শ্রমিক ঝরায় অঝোর ঘাম।হাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একদিন শেষ হয়ে যাবে এসব শ্রমিকদের গল্প।হয়ত আর খুজে পাবো না এ অপ্রকাশিত বন্ধুদের।তারা অনেক অর্থধারী না হলেও তারা বিজয়ী।যুগ যুগ ধরে মনে পড়বে তাদের কথা।মহান মে দিবসে এ সকল শ্রমিকদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

লেখিকা : ফাতেমা ফরাজী বিথী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Tags: