muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

কিশোরগঞ্জ-৪ : আ.লীগে রেজওয়ানে আস্থা বিএনপিতে ফজলুর

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪। জেলার মোট আয়তনের প্রায় ৪০ ভাগ এলাকা কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) অধীন। তাছাড়া কিশোরগঞ্জ শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের ২৫-৩০ ভাগই হাওরবাসী। ‘হাওরের রাজনীতি কেবল এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, কিশোরগঞ্জ শহরেও বিস্তৃত।’

আসনটি অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস ও ফলাফল পরিসংখ্যানে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দশটি নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মাত্র একবারই বিএনপি এই আসনে জয়ের স্বাদ পায়। আর বাকি নয়টি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ এই আসনটি নিজেদের দখলে নেয়। আর এ আসনটি থেকে রেকর্ড সংখ্যক সাতবার এমপি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। পরবর্তীতে তিনি দুইবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারদলীয় জোট প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবার পর তার শূণ্য আসনে ৩রা জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তার বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক পুনরায় দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন।

অতীতে এ আসনের নির্বাচনে আবদুল হামিদের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কাছে বারবার হার মেনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই তার বাগ্মিতার জন্য জনপ্রিয়। সামনের নির্বাচনেও তিনি যে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন, এটি প্রায় নিশ্চিত। তাই যদি হয় তাহলে আগামী নির্বাচন হবে পুত্রের সঙ্গে পিতার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটযুদ্ধ।

এদিকে তৌফিক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও তিনি সক্রিয়। তার বাবা সংসদে ডেপুটি স্পিকার এবং স্পিকার থাকার সময় থেকে এখন পর্যন্ত এলাকায় মেগা উন্নয়ন থেকে শুরু করে নানারকম উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব উন্নয়নে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও শরিক হচ্ছেন এবং তদারকি করছেন। তিনি তার বাবার মতই সাদামাটা স্বভাবের মানুষ। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে সহজে মেলামেশা করার স্বভাবটা উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। এছাড়াও এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহানের নাম প্রার্থী হিসেবে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তৌফিকের প্রার্থিতা প্রায়ই নিশ্চিত।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটারদের মূল আলোচনা নৌকা ও ধানের শীষের সম্ভাব্য এই প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। তবে আরও অনেকেই মনোনয়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তারা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নানা সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রাথমিক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীদের সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। অনেকে জনসংযোগের পাশাপাশি শোডাউন করছেন, পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

স্হানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) সংসদীয় আসন মানে দেশের প্রত্যন্ত হাওর এলাকা। আর এ তিন উপজেলার সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জনগণের টানে সব সময় এলাকায় বসবাস করেন। সৎ রাজনীতিবীদ হিসেবে পরিচিত এমপি তৌফিক গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনগণের পাশে থাকেন।

রাজনীতিতে তৌফিককে পেছনে ফেলে দেওয়া মোটেও সম্ভব হবে বলে মনে করেন না অভিজ্ঞজনেরা। হাওরাঞ্চলের অধিবাসী একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ আইনজীবী বলেন, ‘একাধিক বার যে আসন থেকে পিতা নির্বাচিত হয়েছেন, তৌফিক সাহেব নিজেও সেখানে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। পিতার ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা এবং নিজের তারুণ্যময় গতিশীলতার মিশেলে তিনি এলাকার রাজনীতিক কার্যক্রম যোগ্যতার সঙ্গেই চালাচ্ছেন এবং নবীনে-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল কমিটি ও নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তিনি হাওরাঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম কাণ্ডারিতে পরিণত হয়েছেন। মানুষের কাছে তিনি পিতার যোগ্য উত্তরাধিকার রূপে সমাদৃত।’

অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আসনটিতে নির্বাচনের আগাম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান।

ফজলুর রহমানের অনুসারীরা জানান, এ আসনটি থেকে ফজলুর রহমান মনোনয়ন পাবেন এমনটা অনেকটাই নিশ্চিত। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আসনটি তার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান উপহার দিতে পারবেন বলেও আশা করছেন তারা।

এদিকে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান অন্য কথা। ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বলেন, হাওরাঞ্চলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বলে যাকে বলা হচ্ছে, ‘সেই ফজলুল রহমান জনসংযোগের এই দায়িত্বটি পালন করেন না। কিশোরগঞ্জ শহরে তার কোনও বেস নেই। এমন কি, প্রলয়ঙ্করী বন্যার ভয়াবহ দুর্যোগের সময়েও তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় টিমের সঙ্গে একদিন এসে মাত্র এক বেলা ইটনা ঘুরে চলে গেছেন। অন্যত্র কোথাও যান নি। বিপদগ্রস্ত কৃষকের পাশে গিয়ে দাঁড়ান নি। ফজলুর রহমান এসেছিলেন বটে। তবে সেটা তার অর্জনের চেয়ে বিসর্জন হয়েছে।’

এমন আরেকজন জানান, গত বছর আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসী তাকে কাছেই পায় নি। ইটনার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এবং অষ্টগ্রাম বা মিঠামইন একবারের জন্যেও আসেন নি তিনি। এখানকার মানুষ তা ভালো ভাবে নেয় নি। মানুষ এজন্য ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

দলের দুর্দিনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন জানিয়ে উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে তার পক্ষেই কাজ করব।

অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান ছাড়াও এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চনের ছেলে ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন, কিশোরগঞ্জ বারের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান শিকদার।

এ ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অষ্টগ্রাম উপজেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী আফতাব ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা তপু ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১৭-মে২০১৮ইং/এন

Tags: