muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কুলিয়ারচর

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিসহ হামলার শিকার ২ সাংবাদিক

স্টাফ রির্পোটার : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ইব্রাহিম মিয়া নামক ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ কর্তৃক ৩য় শ্রেণীর এক ছাত্রী (৯) কে যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও দৈনিক প্রজন্ম ডটকমের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি মোঃ মাইন উদ্দিন নামে ২ সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি বাসষ্ট্যান্ড-ডুমরাকান্দা বাজার রাস্তায় উত্তর সালুয়া নামক স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও মোঃ মাইন উদ্দিন ওই দিন বিকেলে এলাকাবাসীর উদ্দ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলের ছবি তুলতে যাওয়ায় ইব্রাহিম পক্ষের প্রভাবশালী মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী তমাল, বাবুল, লাল বাদশা সহ ১০/১২ জন লোক তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের লাঞ্চিত সহ মারধর করে তাদের হাতে থাকা ক্যামেরা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা সাংবাদিক কাইসার হামিদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় কুলিয়ারচর থানার কর্তব্যরত এস.আই মোঃ আজহারুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ ঘটনায় কুলিয়ারচর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলার উত্তর সালুয়া গ্রামের হত দরিদ্র এক কৃষকের কন্যা স্থানীয় চেতনা স্কুলের ৩য় শ্রেণীর এক ছাত্রী প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে যাওয়ার পথে চেতনা স্কুল দাতা পল্লী চিকিৎসক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া (৬৫) ওই ছাত্রীকে তার বসত ঘরে ডেকে নিয়ে টেস্টি হজমী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তার পরনের কাপর খুলে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এসময় স্কুল ছাত্রীর চিৎকারে ওই বৃদ্ধ ছাত্রীকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত ইব্রাহিমের পক্ষ হয়ে এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার গভীর রাতে প্রভাবশালী মাতাব্বর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কুলিয়ারচর উপজেলা আমির মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু মাস্টারের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী অহিদ মিয়ার বাড়িতে ছাত্রীর বাবাকে ডেকে নিয়ে এক শালিসের আয়োজন করে। শালিসে অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধকে নাম মাত্র কয়েকটি জুতা পেটা করে ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারন করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়।

শালিসে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ বকুল মিয়া (৫০), মোঃ লাল বাদশা (৪৫), মোঃ অহিদ মিয়া ( ৫০), মাছুম (৩০), তমাল (৩০) ও ছাত্রীর বাবা সহ ৭-৮ জন ব্যাক্তি রাতের আঁধারে এমন ধরনের ন্যাক্কার জনক ঘটনা শালিসের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী মঙ্গলবার বিকেলে এর প্রতিবাদে দ্বাড়িয়াকান্দি-ডুমরাকান্দা বাজার রাস্তায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন উত্তর সালুয়া শেখ কামল পরিষদের সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম, সালুয়া ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মোঃ বোরহান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আব্দুল হাই। সংবাদ পেয়ে ওই দিন বিকেলে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়া ঘরে তালা ঝুলছে। অভিযুক্ত বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধের মেয়ে শিরিন সুলতানা (৪০) এর সাথে। তিনি অকপটে বাবার অপরাদের কথা স্বীকার করে বলেন, সোমবার রাতে এলাকাবাসী শালিসে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছে।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শালিসে তার বাবাকে জুতা পেটা করেছে শালিসানগণ। ছাত্রীর বাবার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মেয়ে শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টার কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছে।

তবে ৫০ হাজার টাকা তিনি পাননি দাবি করে বলেন, মেয়ের ইজ্জতের কথা ভেবে এবং এলাকার মাতাব্বরদের কথায় বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করিনি। শালিসে সামাজিক ভাবে বিচার করে বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করে দেওয়ার কথা স্বীকার করে মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, লাল বাদশা ও বাবুল মিয়া বলেন, গ্রাম্য ভাবে সবকিছু মিমাংসা করা যায়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার কথা জানতে চাইলে তারা এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করে চেতনা স্কুলের শিক্ষিকা মোছাঃ হোসনে আরা বলেন, ওই ছাত্রী তার নিকট সকল ঘটনা খুলে বলেছে।

স্থানীয় সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আঙ্গুর মিয়া ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ বিল্লাল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইমলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন। বিক্ষোভ মিছিলের ছবি তুলতে গেলে ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা করে প্রভাবশালী শালিসানগনণ প্রমাণ করেছে লম্পট ইব্রাহিম মিয়ার পক্ষ নিয়ে তারা ছাত্রী বাবা মাকে হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করে এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গভীর রাতে শালিসের আয়োজন করে। সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সালুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ইউসুফ মিয়া বলেন, ২ টি ঘটনাই আপোষ মিমাংসার চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নান্নু মোল্লা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Tags: