muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

ফিচার

মানবতার ফেরিওয়ালা প্রদীপ কর্মকার

যত জীব তত্র শিব’ অর্থাৎ স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যেই শিব বা সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ভালবাসলেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজ স্বার্থ ছেড়ে নিস্বার্থ হওয়া সাদা মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু ঐ কঠিন বাস্তবতায় কিছু মানুষ থাকে, যারা হাজারো মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে থাকে।

প্রদীপ কর্মকার।জন্মগ্রহণ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে।বাবা ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক এবং পরবর্তীতে শোভা ট্রিমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন।তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে প্রদীপ কর্মকার ছিলেন তৃতীয়।

গ্রামের স্কুল দিয়ে হাতেখড়ি শিক্ষা শুরু হয় প্রদীপ কর্মকারের।সুলতানসাদী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও তারপর পড়াশোনা করেছেন জগন্নাথ কলেজে(বর্তমান বিশ্ববিদ্যাল) অর্থনীতিতে বিষয়ে।ছোটবেলা থেকে অন্যের না পাওয়ার বেদনাকে তাকে শিহরিত করতো।

স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে গরীব,অসহায়,দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের পেছনে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাবেন।
সবাই যেখানে আত্নকেন্দ্রিক ও নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সেখানেই প্রদীপ কর্মকার মানবতার ফেরিওয়ালা রুপে আবির্ভূত হন।

তাই আশেপাশে কি ঘটছে, কে কি করছে, কে কেমন আছে, ঐসব বিষয় যেখানে কারো ভাবার সময় থাকেনা সেখানেই তিনি ছুটে চলেন।

বর্তমানে তিনি শোভা ট্রিমস লিমিটেডের পরিচালক। যিনি অন্ধকারচ্ছন্ন মানুষগুলোকে নিজস্ব প্রদীপের মাধ্যমে আলোকিত করে। তার হ্নদয়,কাজ, ব্যক্তিত্ব অতুলনীয়। স্বার্থছাড়া যেখানে মানুষ পরিশ্রম করতে চায় না,সেখানে তিনি মানবসেবার মধ্যদিয়ে নেশার মত ছুটে বেড়ান অসহায় মানুষের খোঁজে। বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহযোগিতা, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবা দায়িত্ব নেয়া, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সু-শিক্ষার ব্যবস্থা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করে দেওয়াসহ একজন সাদা মনের মানুষের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে প্রদীপ কর্মকার বলেন,ছোটবেলা থেকেই নিজেকে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই চলতে হয়েছে।তারপরও দমে যাইনি।লক্ষ্য স্হির করে এগিয়ে চলেছি।তখন থেকেই উপলব্দি করতাম মানুষ কেন বারবার পিছিয়ে পড়ে।অসহায়,দরিদ্রতা কিভাবে মানুষের স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

আমাকে এসব ব্যাপার খুব ভাবাত কিন্তু মনোবল থাকা সত্ত্বেও সাধ্যের জায়গাটা ততোটুকু জোরালো ছিল না।
আজ নিজেকে ভালো অবস্হানে গড়ে তুলতে পেরেছি।তাই ছোটবেলার মনোবলকে কাজে লাগাতেই অসহায় দরিদ্র,সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার কাছে সুখের।

প্রদীপ কর্মকার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেরাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করে থাকেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন,ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম তখন বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। এতে পুরস্কার অর্জনের ফলে নিজের মনোবলটা অনেক বেড়ে যেত।

মূলত ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মন,স্বাস্থ্য এবং নিজেদের কাজকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যেই এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি।

অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উপকরণ ও বিদ্যালয়ে অনুদানেও পিছিয়ে নেই তিনি।

বাংলাদেশে যেখানে কর্মসংস্থান জনসংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল সেখানে তিনি নিজেই অসহায়,দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে চাকুরী করার সুযোগ দিচ্ছেন।

প্রদীপ কর্মকার বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের প্রচুর অভাব রয়েছে।

অথচ কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকের সংসারে নিয়মিত ভাত জোটে না।তাই নিজেদের কপালকে সবচেয়ে বেশী নিষ্ঠুর দাবি করে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।

মূলত যারা অসচ্ছলতা ও অসহায়ের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে অথচ অনেক মেধাবী তাদেরকে ছোটখাটো কর্মসংস্থানের ব্যবস্হা করে দিচ্ছি।

গরীব ও অসহায়দের পাশে সবসময় এগিয়ে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমি কখনো নিজের জন্য ভাবিনা।ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি আমাকে এখনো ভাবায়।গরীব,অসহায়দের পাশে দাড়ানোর অনুপ্রেরণা জাগায়।অস্বচ্ছল পরিবারে শিক্ষার আলো,শিক্ষার উপকরণ দিয়ে তাদেরকে উপরে তুলে আনার অনুভূতি জাগায়।

মূলত মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম থাকলে এসব কাজে নিজেদের উদ্ভূত করা কোনো ব্যাপার নয়। তাছাড়া সরকারের একার পক্ষে সমাজের এসব সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব নয়।বরং বেসরকারী সংগঠনের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।এতে নিজেদের মন যেমন উদার হবে তেমনি অন্যের মুখেও হাসি ফুটবে।

 

সাইফুল ইসলাম (সজীব)
শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Tags: