muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

পুনরায় পেনশন পাবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

যেসব অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী শতভাগ পেনশন উত্তোলন করেছেন তাদের পুনরায় পেনশনের আওতায় আনার বিষয়টি অনুমোদন করেছে সরকার। এটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সুবিধা ভোগ করবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় আসবেন প্রায় ২০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী। এজন্য পেনশন খাতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা। অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী শতভাগ পেনশন উত্তোলন করেছেন, কেবল তারাই পুনরায় এই পেনশন সুবিধার আওতায় আসবেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবসরের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৫ বছর। এক বছর আগ থেকে এ সুবিধা দেওয়ায় পেনশনের পাশাপাশি তাদের একটি করে ইনক্রিমেন্টও দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের আবারো পেনশনের আওতায় আনার প্রস্তাবটি প্রথমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুমোদন করেন।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে চারটি বিধান রাখা হয়েছে।

প্রথম বিধানে বলা হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্তের পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে। চাকরিজীবীর এলপিআর বা পিআরএল যে তারিখে শেষ হয়েছে তার পরদিন থেকে উক্ত ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। আর যিনি এলপিআর বা পিআরএল ভোগ করেননি তার ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে উক্ত ১৫ বছর সময় গ্রহণযোগ্য হবে।

দ্বিতীয় বিধানে বলা হয়েছে, যে পদ্ধতি ও নিয়মে নিয়মিত পেনশনারগণের মাসিক পেনশন নির্ধারিত হয় অনুরূপ পদ্ধতি ও নিয়মে শতভাগ পেনশন সমর্পনকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিন পেনশন নির্ধারিত হবে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর এলপিআর শেষ হয়েছে ২০০২ সালের ৩০ জুন। তার অবসরের পর থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হয়েছে ২০১৭ সালের ১ জুলাই। তিনি যদি ১ নং গ্রেডভুক্ত হন তাহলে জাতীয় বেতনস্কেল, ১৯৯৭ অনুযায়ী তার বেতন ১৫ হাজার টাকা (নির্ধারিত) হওয়ায় তার মাসিক নিট পেনশনের পরিমাণ হবে ১৫ হাজারের ৮০ শতাংশ ভাগ ২, অর্থাৎ ৬ হাজার টাকা।

জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৫ অনুযায়ী মাসিক নিট পেনশন হবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আবার জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সের পেনশনভোগীর নিট পেনশনের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় তার নিট পেনশন হবে ১১ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া, জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সের পেনশনভোগীর নিট পেনশনের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় ২০১৭ সালের ১ জুলাই তার নিট পেনশন হবে ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা। সুতরাং ২০০২ সালের ৩০ জুন বা তার আগে এলপিআর শেষ হয়েছে ১ নং গ্রেডের এমন শতভাগ পেনশন সমর্পনকারী অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীর ২০১৭ সালের ১ জুলাই তারিখে মাসিক নিট পেনশন হবে ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা।

তৃতীয় বিধানে বলা হয়েছে, নিয়মিত পেনশনারদের ন্যায় শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরভোগীদেরও ন্যূনতম মাসিক পেনশন হবে ৩ হাজার টাকা।

চতুর্থ বিধানে বলা হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীর ২০১৭ সালের ১ জুলাই বা তার পরবর্তী সময়ে যে পেনশন নির্ধারিত হবে তার ওপর প্রতিবছর ১ জুলাই ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদেয় হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১ নং গ্রেডের ২০১৭ সালের ১ জুলাই তারিখে যার মাসিক নিট পেনশন হবে ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা, প্রতিবছর ১ জুলাই ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদেয় হওয়ায় ২০১৮ সালের ১ জুলাই তার মাসিক নিট পেনশন হবে ১৭ হাজার ৭১৮ টাকা ৭৫ পয়সা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ পেনশন বিক্রি বা সমর্পণ প্রথা চালু হয়। আর ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ পদ্ধতি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি একই বছরের ১ জুলাই থেকে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের বিধান চালু করা হয়। দীর্ঘ ২৩ বছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশনের শতভাগ টাকা তুলে নিয়ে অবসরে গেছেন। বর্তমানে এসব চাকরিজীবী বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী দুটি উৎসব বোনাস, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও মাসিক চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম গত বছর উল্লিখিত সুবিধা পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে। পরবর্তীকালে অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করে শতভাগ সমপর্ণকারী পেনশনার্স ফোরামের নেতারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন পেনশন পুনঃস্থাপনের আবেদন করেন। এছাড়া, একই সুবিধা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অবসরাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী।

উল্লিখিত সংগঠন ও সমিতির পক্ষে পেনশন পুনঃস্থাপনের আবেদনে বলা হয়, শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের অনেকে পেনশনের অর্থ বিভিন্নভাবে নষ্ট করে ফেলছেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেউ কেউ। আবার জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে।

পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে প্রতারিত ও প্রলোভনে পড়ে প্রাপ্য অর্থ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে পেনশনের অর্থ অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি। ফলে তাদের অনেকে চরম আর্থিক দৈন্যে পড়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিজের সন্তানের কাছে এবং বৃদ্ধাশ্রমে।

সরকারি চাকরিজীবী হওয়া, বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকে অন্য কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বন্ধুদের মাসিক সাহায্যের ওপর বেঁচে আছেন। তাদের আবেদনে আরো বলা হয়, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা সহায়তা পেলেও পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত অসচ্ছল চাকরিজীবীরা এ ধরনের কোনো কর্মসূচিতে নেই। ফলে তারা এক যন্ত্রণাময় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।’

সূত্র জানায়, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম এবং অন্যদের আবেদন-নিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রবৃদ্ধি, বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান) প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে দুটি সুপারিশ করে।

জানা যায়, এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পেনশন পদ্ধতি পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর এটি অনুমোদন দেন অর্থমন্ত্রী। গত মাসেই প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে।

Tags: