muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

নির্বাচন

কিশোরগঞ্জ – ৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) : আসন ধরে রাখতে ব্যাস্ত আঃ লীগ পুনরুদ্ধারের চেষ্ঠায় বিএনপি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হওয়ার আগ থেকেই সারা দেশের ন্যায় ভৈরব –  কুলিয়ারচর দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ -৬ সংসদীয় আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। তবে এ আসন অনেকটা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফলে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। কেননা স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৭২ পরবর্তী সময়ে তিনবার বিএনপি আসনটি দখলে নেয়। যদিও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১২ দিনের বেশি টিকতে পারেনি তারা। এছাড়া একবার জাতীয় পার্টি আসনটি দখলে নেয়। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সাতবারই আওয়ামী লীগ এ আসনটি দখলে নেয়। ফলে আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি পায় এ আসনটি।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে নির্বাচনের হাওয়া বইছে। আওয়ামী লীগ থেকে এ বছর দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে । একজন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন। অন্যজন হলো ভৈরব শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন বেনু। যদিও দল থেকে নাজমুল হাসান পাপন ছাড়া অন্য প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা নাজমুল হাসান পাপন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমান ও ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত নারী নেত্রী শহীদ বেগম আইভি রহমানের একমাত্র ছেলে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। এছাড়াও নাজমুল হাসান পাপন বাবার পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও নিজের ইমেজ কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে চান। বাবার মতো তিনিও নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

দলীয় নেতাকর্মীদের মতে আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ পবিত্র ঈদ-উল-আযহার পর থেকে দল গোছানোসহ বেশকিছু সভা-সমাবেশের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে নাজমুল হাসান পাপন কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি জনসভা করছেন। এসব জনসভায় অংশগ্রহণ করেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। এরই ধারা অব্যাহত রাখতে ৩ নভেম্বর কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে দুই উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে দলের অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলনও শেষ পর্যায়ে। ফলে বেরিয়ে আসছে নতুন নেতৃত্ব।

অন্যদিকে সভা-সমাবেশসহ দলীয় কর্মকান্ডে ভিন্ন সময় বাধা-বিপত্তির কারণে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। এছাড়া একাধিক মামলার কারণে দলটির শীর্ষ নেতাসহ অনেকে এলাকার বাইরে আছেন ও রয়েছেন। এরপরও ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া তারাও । এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি মোঃ শরীফুল আলম সিআইপি। তার জন্য আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় বাধা নিজ দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা ভৈরব উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ গিয়াস উদ্দিন। তিনিও মাঠে রয়েছেন। ফলে তার অনুসারীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। মোঃ গিয়াস উদ্দিনের দাবি, বিএনপি’র প্রয়োজনে মাঠে তার প্রয়োজন পড়বে তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেলে অবশ্যই আসনটি দলকে উপহার দিতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। তবে মোঃ শরীফুল আলমের রয়েছে ব্যক্তি ইমেজ। একজন শিল্পপতি হিসেবে প্রায়ই মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তিনি। এসব বিষয়কে পুঁজি করে সামনে এগোতে চায় দলটি। তাছাড়া এ আসনে সম্মিলিত জাতীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কিশোরগঞ্জ জেলার যুগ্ন আহব্বায়ক ও ভৈরব উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ রুবেল হোসেন। তিনি এ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোমবাতি মার্কায় ভোট চেয়ে নির্বাচনী এলাকায় গন সংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। অপর দিকে ইসলামিক শ্বাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে হাজী মোহাম্মদ মুছা খান জনগনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে হাত পাখা মার্কায় ভোট চেয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচরের বিভিন্ন স্থানে দেয়াল পোষ্টার টানিয়ে ও মোটর সাইকেল বহর নিয়ে এক দিন শোডাউন করে আর মাঠে না থাকায় ও জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় অবস্থান না থাকায়, কোনো প্রার্থী না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তাই যত জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীকে নিয়েই।
২টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভৈরব-কুলিয়ারচর সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৬। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৮ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮০ জন ।

এদিকে আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান পাপনের কোনো ‘বিকল্প’ নেই বলে জানান, ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ সায়দুল্লাহ মিয়া। এছাড়াও এ আসনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান পাঁচবার বিজয়ী হন। ফলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মোঃ জিল্লুর রহমানের পর এ আসনে তারই একমাত্র ছেলে দুইবার বিজয়ী হয়েছেন। এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নাজমুল হাসান পাপনকেই বেছে নেবেন ভোটাররা।

কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান বলেন, ভৈরব – কুলিয়ারচরের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে, আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান পাপনের বিকল্প নেই। বিগত সময়ের উন্নয়নের জোয়ার দেখে ভোটারগণ আবারও নাজমুল হাসান পাপনকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন এমন আশাই ব্যাক্ত করেন তিনি। এছাড়া অন্যদিকে ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম ও কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপি’র সধারন সম্পাদক নুরুল মিল্লাত বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের দলীয় কর্মকান্ডে বিভিন্ন সময় বাধা দেয়। একই সঙ্গে একের পর এক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। ফলে আমরা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলেও কৌশলগতভাবে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে অবশ্যই বিএনপি প্রার্থী মোঃ শরীফুল আলম বিজয়ী হবেন বলে দাবি করেন তারা ।

Tags: