আশিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম।। স্বাস্থ্যই সম্পদ, সুস্বাস্থ্য জীবন ও দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক সবার শীর্ষে। বর্তমান সরকারের দশটি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে গ্রামীণ অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থাপিত হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত ১৩হাজার ৮৬১টি গরীবের হাসপাতাল নামে খ্যাত এই কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামীণ অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে গ্রামের অবহেলিত জনগোষ্ঠী অতি সহজে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। গ্রামীণ জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসেবা বিতরণে প্রথম স্তর কমিউনিটি ক্লিনিক। এখানে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া বাকি ছয় দিন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে সেবা প্রদান করে থাকেন।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার চর পাত্রখাতা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার মোঃ মমিনুল ইসলাম জানান, “হতদরিদ্র মানুষদের এখানে সাধারণ সেবা দেয়া হয় এবং তা বিনামূল্যে। এখানে ২৯ প্রকার ওষুধ প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রত্যন্ত অ লের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। হাতের কাছে এ ধরণের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি সকলেই। তাদের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকই যেন হাসপাতাল।”
বর্তমানে একটি প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চলছে, এখন ক্লিনিকগুলো ট্রাস্টের আওতায় চলে আসবে। এ সংক্রান্ত একটি বিল গত মাসে পাস হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এ ধরনের আরও এক হাজার ২৯টি ক্লিনিক বাস্তবায়নে সরকারের পরিকল্পনা আছে। এই ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ট্রাস্টের তহবিল ব্যবহার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। নতুন আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক জেলা সিভিল সার্জন, উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ট্রাস্টে সরকারি বরাদ্দ থাকবে, অনুদান থাকবে। এছাড়া কর্মীদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্রাচুইটি এবং অবসর ভাতার সুবিধা রাখা হয়েছে বিলে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শাহিদা বেগম (৪৩) জানান, “এই কিলিনিকটা হওয়াতে আঙ্গোর খুবই উপুকার হইছে। আমার বাচ্চার অসুক হইছিলো এর আগে ওষুদ নিয়া ভালো হইছে। এহুন আইছি আমার কিচু সমুস্যার জইন্যে।” হাতে কয়েকটি স্যালাইনের প্যাকেট নিয়ে ক্লিনিক থেকে বের হচ্ছিলেন সুরুজ্জামাল হক (৪৮)। তিনি জানালেন, “ছোডো মডো কিচু সমেস্যা হইলি আমি এহান থেইক্যাই ওষুদ নেই।”
দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক এখন ডিজিটালাইজড। প্রতিটি ক্লিনিক হতে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য অনলাইনে রেকর্ড বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য তথ্য আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই কমিউনিটি ক্লিনিক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।