কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরে রাস্তাঘাটে বাসা বাড়িতে এখনও সৈয়দ আশরাফের নির্বাচনী পোষ্টার ঝুলে রয়েছে। জেলাবাসী ভাবতেই পারছেন না যে সৈয়দ আশরাফ নেই। জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে কাঁদছে পরিবার, কাঁদছে কিশোরগঞ্জবাসী । শুক্রবার জুম্মার নামাজে ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদসহ সকল মসজিদে মসজিদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করেছেন। জেলা শহরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ফেস্টুন ও ব্যানার তৈরী করে সাটিয়ে তাঁর বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে। বৃহস্প্রতিবার রাতে মৃত্যুর সংবাদটি জানাজানি হওয়ার পর কিশোরগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীরা তাৎক্ষনিক ছুটে যান জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জবাসীর এক অনুভূতির নাম। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান হিসেবে পারিবারিক ঐতিহ্য এবং একজন সৎ, ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে ক্লিন ইমেজের এমন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, সৈয়দ আশরাফের মতো সৎ রাজনীতিবিদ হলে বাংলাদেশ ২০ বছর আগেই উন্নত শিকড়ে আরোহন করতে পারতো। তাঁর সময়ে কিশোরগঞ্জে যে উন্নয়ন হয়েছে তা কিশোরগঞ্জবাসী চিরদিন স্মরণ রাখবে। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জবাসী বিশেষ করে বাংলাদেশ একজন সৎ রাজনীতিবিদকে হারালো বলে জানান।
রাষ্ট্রপতিপুত্র রাসেল আহমেদ তুহিন ফেসবুকে লিখেন, প্রিয় আশরাফ ভাই, বড্ড অসময়ে চলে গেলেন। দেশ, জাতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আপনার অনেক কিছু দেয়ার ছিল। আপনার অনুপস্থিতির এ শূন্যতা আমাদের জন্য অপূরনীয়। আপনার অবদান কিশোরগঞ্জবাসী সহ সারা বাংলাদেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলআমিন আপনাকে বেহেশত নসীব করুন, আমিন।
আওয়ামীলীগ নেতা শিল্পপতি এরশাদ উৃদ্দিন বলেন, আশরাফ ভাই চলে গেলেন। আওয়ামীলীগ আপনার অনুভূতি। আপনার মুখ থেকে আর আদর্শীক কথা শুনা যাবেনা।আল্লাহ ভাইকে তুমি বেহেস্ত দান কর। আমিন।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো রাজনীতিবিদ থাকার কারণেই কিশোরগঞ্জের রাজনীতিক অঙ্গনে শান্ত পরিবেশ ছিল। সৎ পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আমি তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং মহান আল্লাহর কাছে মরহুমের বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি।
শামসুল মালেক চৌধুরী লিটন বলেন, গুলশানে জাতীয় চার নেতার নামে বরাদ্দ প্লটের মধ্যে দুই শতাংশ জায়গা পেয়েছিলেন, সেটুকুও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বিক্রী করে দিয়েছিলেন এই মহামানুষটি। তিনি মনে করেছিলেন যে পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই আমিত সেই ঘরের মালিক নই।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাঈল বলেন, ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। আল্লাহ্পাক মরহুমকে জান্নাতবাসী করুন…..আমিন।
কিশোরগঞ্জ জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফারুক আহাম্মেদ জানান, শুক্রবার জুম্মার নামাজে ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদ,পাগলা মসজিদসহ সকল মসজিদে মসজিদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পিপি অ্যডভোকেট শাহ আজিজুল হক, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যড. আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ সাদী, হোসেনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম নুর মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহ মাহবুবুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোঃ আসাদ উল্লাহ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল গণি ঢালি লিমন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাশির উদ্দিন রিপন, সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম হুমায়ুন, সেচ্চাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শামীম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. আবদুর রশিদ, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাড. ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন,বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহগমান রুমী, জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির আহবায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহীন, সদস্য সচিব ফরিদ আহমেদসহ জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের লোকজন গভীরভাবে শোক প্রকাশ করে মরহুমের বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
বাংলাদেশে সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতির আদর্শ এই নেতা দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই তাঁকে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়। দেশে না থেকেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার আগেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। রাতে তাঁর এই মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।