muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল হচ্ছে

বিনা সুদে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হচ্ছে। সরকার ঋণের সুদ পরিশোধে এ তহবিলের অর্থ ব্যয় করবে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ নেয়া হবে না। সুদ পরিশোধের দায় সরকার নিজেই বহন করবে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক হতে সহজ শর্তে গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়া’ সংক্রান্ত বৈঠকে নেয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ওই বৈঠকে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত খসড়া আকারে খুব শিগগিরই উপস্থাপন করা হবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে। তবে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবের আগে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদের সঙ্গে এ নিয়ে পৃথক একটি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যালোচনা চলছে। আলোচনা-পর্যালোচনা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা সুদে ঋণ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, বর্তমান গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ এই ঋণ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। ওই হিসেবে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা এই ঋণ সুবিধা পাবেন।

প্রতিজন ১০ লাখ টাকা হারে ঋণ পেলে মোট টাকার প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সে হিসাবে প্রথম বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দেয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, তৃতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, চতুর্থ বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা এবং শেষ বছরের জন্য দরকার হবে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।

এই ঋণের বিষয়ে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত ১৪টি শর্ত চূড়ান্ত করা হয়, যা আগামীতে মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণের খসড়া নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে এটি প্রস্তাব আকারে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে অর্থমন্ত্রীর কাছে।

শর্তগুলো হচ্ছে- ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ ঋণ সুবিধা পাবেন সরকারের ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তাধিকারীরা। এই ঋণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ সরল সুদ এবং মাসিক ২ শতাংশ সার্ভিস হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দিতে হবে না। এটি সরকার বহন করবে। ঋণ গ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এই ঋণ প্রদান করে প্রথম বছরে সরকারকে সুদ বহন করতে হবে ৩১২ কোটি টাকা। এটি প্রতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়।

এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ৯ মাস। ঋণের মেয়াদ হবে ১৪ বছর পর্যন্ত। ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১৬ থেকে ১৭ বছর। পাশাপাশি প্রথম বছরের ঋণের অর্থ মেটাতে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। সেখান থেকে ঋণের চাহিদা পূরণ করা হবে।

কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে এ ঋণ দেয়া হলে এককালীন ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ধাপে মোট ঋণের ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে (পরবর্তী তিন মাস পর) ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে (পরবর্তী আরও তিন মাস পর) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেয়া হবে। ঋণের অর্থ বিতরণে এই বিধান আরোপ করা হবে শুধু ঋণের সঠিক ব্যবহারের জন্য।

প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বা মৃত মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য উত্তরাধিকার কেবলমাত্র একবার এ ঋণ সুবিধা পাবেন। জীবিত মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না। তবে মৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে তার সম্মানী ভাতা পাওয়ার যোগ্য অগ্রাধিকারকারী পাবেন।

এক্ষেত্রে অন্যসব অগ্রাধিকারকারী লিখিত সম্মতি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উক্ত ভাতা লিয়েন রেখে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শর্তে আরও বলা হয়, ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা বাসস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রাখতে হবে।

ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অসচ্ছল ও ৫ শতাংশের নিচে ভূমি রয়েছে এমন মুক্তিযোদ্ধারা। এটি শনাক্ত করবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। এই ঋণ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ জমি থাকতে হবে মুক্তিযোদ্ধার নিজ বা স্ত্রীর নামে। ওই জমি নিজস্ব দখলে থাকতে হবে। ঋণের জন্য আবেদনকারীর নাম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত হতে হবে।

শর্ত রয়েছে ইতিপূর্বে সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে বাসস্থান পেয়েছে এমন মুক্তিযোদ্ধারা এই ঋণের সুবিধা পাবেন না। বিনামূল্যে বাসস্থান পাওয়ার বিয়ষটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করা হবে।

সূত্রমতে, মুক্তিযোদ্ধাদের এই ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে সোনালী ব্যাংক লি., অগ্রণী ব্যাংক লি., জনতা ব্যাংক লি., বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তবে উল্লিখিত ব্যাংকের সঙ্গে রূপালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়া হবে।

Tags: