muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

এক বৃদ্ধার মুখে হাঁসি ফুঁটালেন পুলিশের এসআই

একজন থানা পুলিশের সদস্যের নাম এসআই সোহেল রানা। তিনি সম্প্রতি ছাতক থানা থেকে বদলী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় কর্মরত আছেন। অত্যন্ত চৌকস একজন পুলিশ সদস্য তিনি।

তাঁর নামীয় ফেসবুকে ফুলমতি বর্মন নামের একজন অসহায় বয়বৃদ্ধাকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস লিখে আলোচনায় এসেছেন। সর্বমহলে তার ওই কাজ প্রশংসনীয় হওয়ায় তাকে জানাচ্ছেন অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

এসআই সোহেল রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সম্প্রতি তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বনগাঁও গ্রামে গিয়েছিলে। এক পর্যায়ে তিনি ওই গ্রামের একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরের পাশ দিকে যাওয়ার সময় ফুলমতি বর্মন নামের একজন বয়োবৃদ্ধা মহিলার সাথে তার দেখা হয়। পুলিশ দেখে ওই বয়োবৃদ্ধা ফুলমতি বর্মন আক্ষেপের সাথে বলে উঠেন, সরকার আমার ভাঙা ভিটায় আসছে-বসতে দেয়ারতো কিছুই নাই। পুলিশকে বসাতে না পারায় ফুলমতি বর্মনের হাস্যোজ্জল মুখটা মলীন হয়ে যায়।

এসময় সোহেল রানা ওই বৃদ্ধাকে সাধ্যমতো কিছু একটা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তাৎক্ষনিক কিছু সহায়তা করতে না পারায় ব্যর্থ হন তিনি। অবশেষে ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর বেতনের টাকা থেকে চারটি প্লাস্টিকের চেয়ার ক্রয় করে রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদে যান এবং ফুলমতিকে সেখানে ডেকে আনেন। এসময় তিনি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই’র সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করায় পর সরকারি ভাবে একটি ঘর বরাদ্দ দেন চেয়ারম্যান। ঘরটি শীঘ্রই হয়ে যাবে বলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশকে আশ্বস্থ করেন।

পরে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই ও সমাজসেবী আবদুল আলীর উপস্থিতিতে বেতনের টাকায় কিনা চারটি চেয়ার ওই ফুলমতিকে দিলেন সোহেল রানা। পুলিশের কাছ থেকে চেয়ার পেয়ে তিনি খুশিতে আত্মহারা। আরো খুশি হয়েছেন তাকে একটি বসতঘর বরাদ্দ দেয়ায়। পুলিশও যে মানুষ, মানবিক আচরণ দয়াশীল তা বুঝে মলীন মুখে একটু হাঁসি ফুটল ফুলমতি বর্মনের।

জানা গেছে, সহজ-সরল সাদামাটা নির্লোভ ওই ফূলমতি বর্মন ছিলেন অর্থ বিত্তের জৌলুশপূর্ণ সভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কালের বিবর্তনে তিনি আজ ওই জীর্ণ কুঠিরে করছেন বসবাস। তার স্বামী দীর্ঘ দিন আগে মারা গেছেন। সন্তানরা আছেন কিন্তু কেউ কাছে নেই। মাকে এভাবে ফেলে সন্তানরা তাদের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ভারতে বেশ সুখেই জীবন কাটাচ্ছেন। ইংরেজ শাসন আমলের পূর্বে থেকে ক্ষৈত্রীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকরা এই এলাকায় বসবাস করতেন।

বর্তমানে এখানে আছে ৮/১০টি পরিবার আছে। এরমধ্যে মৃত ব্রজেন্দ্র বর্মনের স্ত্রী ফুলমতি বর্মনের বসবাস। ফুলমতির পাঁচ ছেলে-মেয়েরা সকলেই ভারতে (ইন্ডিয়ায়) বসবাস করছে। সভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হলেও সময়ের বিবর্তনে একখন্ড ভিটের উপর এখন ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর তার শুধু সম্বল রয়েছে। সরলতার সুযোগে সকল সহায় সম্পত্তি ভুমিখেকোরা দখল করে নিয়ে গেছে। এখন সরকারের বয়স্ক ভাতায় চলে তার সংসার। দুই বেলা পান-সুপারি আর এক বেলা ভাত খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে চলে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বিপদ-আপদে চেয়ারম্যান-মেম্বার ও স্থানীয়দের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা একমাত্র ভরসা।

ফুলমতি বর্মনের পাশের ঘরে বসবাস করে আসছেন মৃত নিধু বর্মনের পুত্র সুধন বর্মন (৯৫)। সুধন বর্মনের একমাত্র পুত্র ভোলাগঞ্জে পাথর শ্রমিকের কাজ করে যা রোজগার করে এবং সরকারের দেয়া বয়স্ক ভাতাতেই চলে তাদের অভাবের সংসার। পুলিশের এসআই সোহেল রানা কর্তৃক অসহায় একজন বৃদ্ধাকে বেতনের টাকায় চারটি চেয়ার কিনে দিয়ে এবং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই’র মাধ্যমে বসতঘর বরাদ্দ করে মলীন মুখে হাঁসি ফুঁটিয়েছেন। এমন পুলিশ সদস্য তৈরি হোক সবার ঘরে ঘরে, সব সমাজেই হোক তাদের অবস্থান এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।    

Tags: