সোহান মাহমুদ ওরফে শুভ মৃধা ওরফে ফারুক। নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবেই পরিচয় দেন। অথচ তিনি মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি। তার নেশা সুন্দরী তরুণী মেয়েদের পটিয়ে বিয়ে করা। সর্বশেষ রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ফাঁদে ফেলেন শুভ। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহা ধুমধামে তাদের বিয়ে হয়। খবর পেয়ে পরদিনই ঢাকা থেকে তিন বছরের সন্তানসহ ছুটে আসেন দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপরই শুভর প্রতারণার চমকপ্রদ তথ্যটি জানাজানি হয়।
জানা যায়, বিয়ে পাগল এ ভুয়া প্রকৌশলীর বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাকুন্দা গ্রামে। পিতা আবদুল মজিদ মৃধা একজন বর্গা চাষি। তবে শুভ তার বাবার পরিচয় দেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। এসব মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করে শুভ এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ে করেছেন।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, শুভ একজন প্রতারক। তার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। প্রতারিত পরিবার মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পিতার সংসারে অভাব-অনটনের কারণে শুভর পড়াশোনা করা হয়নি। তাই জীবিকার তাগিদে প্রথমে সিংড়া উপজেলা সদরে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করেন তিনি। এরপর কিছু দিন গাড়িচালক হিসেবেও কাজ করেন। এরপরই রাতারাতি হয়ে ওঠেন প্রকৌশলী! নিজেকে একজন প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচয় দেন বলে জানা যায়।
ভোটার তথ্য ফরমে উল্লেখিত শুভর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক। তবে তিনি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে পারেন নি।
শুভর দ্বিতীয় স্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে শুভ সিংড়া পৌরসভার মাদারিপুর মহল্লার এক ভ্যান চালকের মেয়েকে বিয়ে করেন। শ্বশুরবাড়ি যাওয়া-আসার পথে ওই এলাকার এক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী তার টার্গেট হয়। ২০১৪ সালে শুভ ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কথাবার্তা শুরু করে। গোপন রাখে বিয়ের কথা। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই বছরের ১২ নভেম্বর শুভ সেই ছাত্রীকে আদালতে নিয়ে বিয়ে করে। এরপর আগের বিয়ের কথা জানিয়ে সে দিনই প্রথম স্ত্রীকে গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দেয়। শুভর তালাক প্রাপ্ত প্রথম স্ত্রীর পাঁচ বছরের একটা ছেলে সন্তান রয়েছে।
দ্বিতীয় স্ত্রী আরও জানান, প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় তিনি সংসার শুরু করেন। তারও একটা ছেলে সন্তান রয়েছে। তারপরেও শুভ অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। সর্বশেষ রাজশাহীর মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় বিয়ে করেন। তবে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থী বিয়ের পরদিনই শুভকে তালাক দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত বছরও শুভ ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তখন তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। গত বছর নভেম্বরে শুভ ওই চাকরি ছেড়ে রাজশাহীতে থাকতে শুরু করেন। এ সময় রাজশাহীতে গোপনে তৃতীয় বিয়ের ফাঁদ পাতে।
শুভর তৃতীয় স্ত্রীর প্রতারিত পিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। মেয়েটাকে শুভ প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল। মেয়েটা বড় হয়েছে বলে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। শুভ বলেছিল, তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। তবে সম্পর্ক নেই। ঠিকানা দিয়েছিল নাটোর সদরের। ভেবেছিলাম, মেয়ে ডাক্তার হচ্ছে, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তারা ভালো থাকবে। কিন্তু সবই মিথ্যা। আমরা তার ব্যাপারে থানায় জিডি করেছি।
এদিকে শুভর বাবা আবদুল মজিদ মৃধা বলেন, তার ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তবে নিজেকে একজন সাধারণ কৃষক বলে স্বীকার করে বলেন, সব বিয়েই শুভ একা করেছে। তৃতীয় বিয়ের কথা তাকে কেউ জানায় নাই।
মোবাইলে সোহান মাহমুদ শুভ সাংবাদিকদের বলেন, তিনটা বিয়ে করেছেন, সবগুলোই অ্যাকসিডেন্ট। তবে সবাই কেন সার্টিফিকেট জাল বলছে তা বুঝতে পারছি না।