muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

নির্বাচনে নৌকা ডুবানো মন্ত্রী-এমপিরা আর নৌকা পাবেন না

উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের নাম জমা হয়েছে দলের দফতরে। এ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত হবে আগামীকাল দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সভায়। চ‚ড়ান্ত বিচারে এসব এমপির অনেকেই সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করা এসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুই রকম শাস্তির কথা বিবেচনায় রয়েছে। এর একটি হলো ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া এবং অন্যটি হলো দলের কোনো ফোরাম বা ইউনিটের কোনো স্তরের কোনো পদে না রাখা।

এর আগে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হতে পারে। তবে বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য বিবদমান কোনো পক্ষে না গিয়ে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করেছেন তাদের সাধুবাদ জানিয়েছে দলটি।

দলের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল দুই নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়, সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করা এমপিদের বিষয়ে বলেছেন, ‘নৌকা যাদের এতই অপছন্দ; আমি ভবিষ্যতে তাদের আর নৌকা দেব না।’

এমপিদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান সময়ের আলোকে বলেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা করতে প্রধানমন্ত্রী সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকা দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দলীয় সভাপতির নামে খামে ভরা এমপিদের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ একটি বাক্সে জমা করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জমা পড়া অভিযোগগুলো দায়িত্বশীল নেতারা ফাইল আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। 
আগামীকাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে কিছু এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওপেন-সিক্রেট হলেও রোষানলে পড়ার ভয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে দলের আট বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করছেন।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সময়ের আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবস্থান নিয়েছিলেন বা নিচ্ছেন, তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
তিনি জানান, চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকের বাইরে যারা নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেউ তাদের সহযোগিতা করেছেন কি না এবং কারা সহযোগিতা করেছেন তাদের তালিকা করার জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের বিদ্রোহী এবং বিদ্রোহীদের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করছে, দলের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আবারও অনেকে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাজ করার সাহস দেখাবে। তাই যারা জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা হয়েও নৌকার বিরোধিতা করেছেন; কিংবা নৌকার এমপি হয়ে নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। 

তবে দলের মধ্যে ভিন্ন আলোচনাও আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগে এমন বিরোধিতা আগেও অনেক হয়েছে। অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, জয়ী হয়ে আবার দলে এসেছেন। ক্ষমতার বৃত্তে থাকায় তাদের কারও বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন, এর আগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হয় দাঁড়িয়েছে। 

সর্বশেষ যখন নৌকার এমপিরা, নৌকা ছেড়ে ঘোড়ায় চড়েছেন কিংবা নিজের বাহনকে আনারস দিয়ে মুড়িয়েছেন; নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করতে দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করেছেন তখন তৃণমূল আওয়ামী লীগে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নৌকার এমপিরা নৌকার বিরোধিতা করায় তৃণমূলে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে কিছুটা সাংগঠনিক অস্থিরতা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা শিগগিরই সাংগঠনিক সফরে নামব। এ সফরের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের যেখানে সমস্যা আছে সেখানকার আস্থাহীনতা দূর হয়ে ভারসাম্য ফিরে আসবে। জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের বিভেদ ও অনৈক্য কেটে যাবে।

সূত্র জানায়, তৃণমূলে ভারসাম্য ফেরাতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের পাশ কাটিয়ে হাইব্রিড এমপি-মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যানদের জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন না করতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক এমপি-মন্ত্রীর কারণে দলের আদর্শবান ত্যাগী নেতারা দলে কোণঠাসা হয়ে আছেন। এবারের সাংগঠনিক সফরে দলে তাদের জায়গা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। 

আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে সাংগঠনিক ব্যস্ততা : আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সারাদেশের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। 

জেলা ও জেলার আওতাধীন উপজেলাগুলোতে সর্বশেষ কবে সম্মেলন হয়েছিল তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব ইউনিটকে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের ই-মেইলে, কুরিয়ার সার্ভিসে জেলা থেকে এসব রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন নেতারা। অনেকে হাতে হাতে নিয়ে এসেছেন রিপোর্ট।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী বিভাগের এক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার জেলার রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন সেখানে শুধু সম্মেলনের সাল উল্লেখ করা; মাস ও তারিখ উল্লেখ করা নেই। 

দলীয় কার্যালয় থেকে তাকে সম্মেলনের তারিখসহ আবারও রিপোর্ট দিতে বলা হয়। এ ছাড়া দলের দফতরে উপজেলা নির্বাচনের অভিযোগ বাক্স খোলা হয়েছে। যেসব এমপি নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের বিষয়ে এ বাক্সে অভিযোগ করছেন জেলা-উপজেলার নেতারা। 

Tags: