muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

আত্মসমর্পণ করবে ১৫ জেলার ৬১৪ চরমপন্থি

পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১৫টি জেলার প্রায় ছয়শত ১৪ জন চরমপন্থি দলের নেতা এবং কর্মীরা প্রশাসনের নিকট আত্মসমর্পণ করবে পাবনায়। আগামী ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ এ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নিকট বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান এসব চরমপন্থী দলের সদস্যরা। বিভিন্ন জেলা থেকে এই চরমপন্থি দলের সদস্যদের আত্মসমর্পনকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্বা ব্যাবস্থা।

এক সময় পাবনা ঢালার চর, পুস্পপাড়া, আতাইকুলাসহ উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলাকে পরিচিত ছিল রক্তাত জনপদ হিসেবে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে “শ্রেণী শক্তি খতম কর শ্রমিক রাজ কায়েম কর” এসব মতবাদ নিয়ে স্বাধীনতার পর তৎপরতা শুর করে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিসহ স্থানিয়ো ভাবে নাম দেয়া বাহিনী, নকশাল, সর্বহারা নামের দলের সদস্যরা। ধনীর সম্পদ গরীবের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার কথা বলে চলেছে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। শ্রেনী শত্রু খতমের নামে নিজ নিজ অঞ্চলে  দখল, হত্যা, ডাকাতি সহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে এই চরমপন্থি দলের সদস্যরা। নিজরেদের ভূল আর বিপথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পরিবার নিয়ে সমাজে সাভাবিক জীবন যাপন করতে চায় তারা। 

আইন শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ঘোষণা দিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলার প্রায় ছয় শতাধিক চরমপন্থী দলের সদস্যরা। বর্তমানে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে চরমপন্থীরা আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। এ কারণেই সক্রিয় চরমপন্থী দলগুলো এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পরেছ নিজ নিজ অঞ্চলে। দীর্ঘদিন ভূল পথে পরিচালিত হয়ে নিজেদের ভূল সুধরে নিতে ফিরতে চান স্বাভাবিক জীবনে। 
পুলিশ সূত্রে জানাযায়, চলমান পক্রিয়ার মধ্যে বিভিন্ন চরমপন্থী দলের ৬১৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণের জন্য তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। প্রতিদিনই আরো বিভিন্ন দলের সদস্যরা আত্মসমর্পণের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে। আত্মসমর্পনকারীদের সংখ্যা আরো বারতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশ প্রশাসন। যেসকল জেলার চরমপন্থি দলের সদস্যরা আত্মসমর্পন করছেন পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজবাড়ী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার সক্রিয় বিভিন্ন চরমপন্থী দলের সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পন করবেন। ১৫ জেলা এই চরমপন্থি দলের এই সকল নেতা কর্মীদের আনা হবে পুলিশি নিরাপত্বার মধ্য দিয়ে। আর এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্বা ব্যাবস্থা। জেলার প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ন এবং সন্দেহ ভাজন স্থানে চালানো হচ্ছে অভিযান।এসব দলের মধ্যে রয়েছে পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ( লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটি। আত্মসমর্পনকারীদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আত্মসমর্পন করলেও তাদের নিয়মিত মামলা চলবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা। 

আত্মসমর্পণের কারণ পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থী দলগুলো নির্মূল না হলেও নেতৃত্বশূন্য ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এছাড়া, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও অন্ধকার জগতের অপরাধীর জীবন থেকে তারা সমাজে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা দেয়া হবে। পুলিশ সুপার আরও বলেন, আত্মসমর্পণের পর যেন তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হবে। আবারও তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কিনা, সে দিকে নজরদারি থাকবে। পাবনা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চরমপন্থী দল গুলো অন্তকোন্দল ও পুলিশী অভিযানে মারা গেছে ১৯৭ জন। আগামী ৯ এপ্রিল পাবনায় বাবলু প্রামানিকের নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ( লাল পতাকা) এবং ইউসুফ ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা দলের ১৬০ জন চরমপন্থী সদস্যের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের কথা রয়েছে। 

৮ এপ্রিল আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের স্ব-স্ব জেলা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পাবনায় নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে। এজন্য পাবনায় বাড়তি নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রায় ৫০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, আত্মসমর্পণকারী যেসব চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিচার চলতে থাকবে। এক সাথে বিপুল সংখ্যক চরমপন্থি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অপরাধের পরিমান কমে আসবে। এ ছাড়া আত্মসমর্পণ করার পরও তারা নতুন করে অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন।

Tags: