muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

দাদির পাশে চিরনিদ্রায় রাফি

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে প্রায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সোনাগাজীর সাবরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার জন্য আনা হয় নুসরাতের মরদেহ।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে নামাজের জানাজা পড়ান নুসরাতের বাবা মাওলানা মুসা। এসময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ও ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আলাউদ্দিন নাসিম, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক এনামুল করিম, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল ফারভেজ প্রমুখ। এছাড়াও জানাজায় ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছে। সঙ্গে নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা রয়েছেন। সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার মেজো মৌলভী বাড়িতে মরদেহ এসে পৌঁছালে সর্বস্তরের মানুষ নুসরাতকে দেখতে আসে। এসময় ওই বাড়িতে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পড়ে যায় কান্নার রোল।

এর আগে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে নুসরাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সকালে নুসরাতের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিকাল পাঁচটার দিকে নুসরাতের মরদেহ নিয়ে গ্রামে এসে পৌছায় তার পরিবার। এ সময় প্রতিবেশি, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা ভিড় করে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে।

এদিকে নুসরাতের হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়েছেন সবস্তরের মানুষ। জানাজায় অংশ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ অশ্রুভেজা নয়নে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান। এছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। তারা অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।

নুসরাত এ বছর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানির’অভিযোগ এনে গত মার্চে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার।

সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শনিবার রাতেই ঢামেক হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

শরীরে ৭৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি। নুসরাতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন। পলাতক ৫ জন। এ ঘটনায় বুধবার সোনাগাজী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। আর মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার আটক মাদরাসা অধ্যক্ষের ভাগ্নি ও নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি ও এজাহারভুক্ত আসামি জোবায়েরকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া আগে থেকেই গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি মাদরাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত সেই অধ্যক্ষকে আইনি সহায়তা করে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে। তাঁর নাম সোহাগ আহমেদ বুলবুল। তিনি উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি কাজীরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

Tags: