muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

মুক্তিযোদ্ধার কথা

পাকিস্তানি মিলিটারি আসলে হাতবোমা মেরে খতম করে দেব : নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু

ঢাকা শহরে আমি বড় হয়ে উঠেছি পল্টন এলাকায়। এটি সবসময়ই ছিল ঢাকার রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল। ছেলেবেলায় চোখের সামনে দেখেছি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন। স্কুলে থাকতেই আমাদের মাথায় ঢুকে যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের শোষণ করছে, ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। তবে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আমরা ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়ন ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি। ৭০-এর নির্বাচনের পরও যখন আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হলো না, তখন থেকেই অন্যসব বাঙালির মতো আমরাও ছিলাম বিক্ষুব্ধ। আমরা দলমত ভুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ যেমন শুনতাম, তেমনি শুনতাম মাওলানা ভাসানির ভাষণও। মুক্তিযুদ্ধে দলে দলে যোগ দেওয়ার পটভূমিটা গড়ে তুলেছিলেন আসলে সেই সময়ের রাজনীতিকরা। তারা জনগণকে বোঝাতে সমর্থ্য হয়েছিলেন যে, বাঙালিকে সব জায়গায় অবদমিত রাখা হচ্ছে।

এ দেশের মাটিতে নিজের মতো বেঁচে থাকার স্বপ্নই আমাদের আসলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে প্রেরণা জোগায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পর শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। পল্টন এলাকায় আমি, আসাদ, বেবী, জমি, ইমরান ও আরো অনেকে মিলে ব্যরিকেড গড়ে তোলার স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভাসে। রাস্তায় বড় বড় পাইপ আর গাছের গুঁড়ি ফেলে আমরা ব্যরিকেড গড়ে তুলেছিলাম। নিজেরাই কিছু হাতবোমা বানিয়ে গাছের গুড়ির আড়ালে বসে থাকতাম, কখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আসে। মিলিটারি আসলে তাদের হাতবোমা মেরে খতম করে দেব, এই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু হাতবোমা মেরে কি মেলেটারি রুখে দেয়া যায়? আসলে মিলিটারিদের সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, হাত বোমা দিয়ে ওদের রুখে দেওয়া সম্ভব না। মিলিটারিদের সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও এই আমরাই রণাঙ্গনে তাদের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি।

আমাদের বাসা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কাছাকাছি। ৭১-এর ২৫ মার্চ সবার আগে মিলিটারিরা রাজারবাগে ধ্বংসলীলা চালায়। সে কি ভয়াবহ রাত, গুলি-গোলার আওয়াজে আমাদের বাড়ি থরথর করছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি ট্যাংকের গোলা এসে আমাদের বাড়ি পড়লো। দুইদিন পর কারফিউ শিথিল হলে আমি বেরিয়ে পড়ি অজানা গন্তব্যে। প্রথমে জিঞ্জিরা যাই। কিন্তু সেখানেও মিলিটারি হামলার আশঙ্কায় বিক্রমপুরের দিকে চলে যেতে হয়। এর মধ্যে খবর পাই, চট্রগ্রামে সৈন্যরা নাকি লড়াই করছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে চৌদ্দগ্রাম-ফেনী হয়ে চট্রগ্রাম পৌঁছাই। কিন্তু ততোক্ষণে পাকিস্তানি মিলিটারিদের তোপের মুখে বিদ্রোহী সেনারা পিছু হটে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় শেল্টার নেয়। আমি তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আগরতলা পৌছাঁই। সেখানে মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর হায়দার ও আরো অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তারা আমাকে বলেন, ট্রেনিংয়ের সব ব্যবস্থা আমরা করছি। তুমি ঢাকায় গিয়ে লোকজন নিয়ে আসো। আমি তাদের নির্দেশ মতো কাজ করি।

Tags: