muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

তথ্য প্রযুক্তি

টিকটকের নেপথ্যের কাহিনী

বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর মধ্যে একটি হলো, ছোট আকারের ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘টিকটক’। এটি এমন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেখানে বিভিন্ন গান, বিখ্যাত সিনেমার সংলাপসহ নানারকম মজাদার অডিওর সঙ্গে ঠোঁট মেলানোর ভিডিও থেকে শুরু করে ভাইরাল চ্যালেঞ্জের ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করা যায়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে একশ কোটি বার ডাউনলোডের মাইলফলক পেরিয়েছে টিকটক এবং এর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বেড়েই চলেছে। টিকটক এখন বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম, এমনকি তারকাদেরও আসক্তি। এটি চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন অ্যাপ, যা মাত্র কয়েকবছর আগে এসেছে। টিকটক কীভাবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, সেই নেপথ্যের ঘটনা এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।

ছোট আকারের মজার ভিডিও শেয়ারে অবিশ্বাস্য রকম জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটির ইতিহাস জানার আগে যেটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, এর যাত্রা কিন্তু টিকটক হিসেবে শুরু হয়নি।

* চীনের খ্যাতনামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অ্যাপ টিকটক। চীনা এই টেক জায়ান্টের মালিকানায় রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ। প্রতিষ্ঠানটির সদরদপ্তর বেইজিংয়ে অবস্থিত।

* বাইটড্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ঝাং ইমিং। ২০১২ সালে তিনি কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঝাং ইমিংয়ের নাম চীনের বাইরে অনেকের কাছেই অজানা কিন্তু ৩৫ বছর বয়সি এই সিইও শুরুতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।

বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ঝাং ইমিং

* ঝাং এবং তার কোম্পানি বাইটড্যান্স প্রথমে একটি নিউজ এগ্রিগেটর অ্যাপ তৈরি করে। এটি এমন একটি অ্যাপ যেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটে পাঠকদের পড়ার উপযোগী কনটেন্ট সাজেস্ট করে, যা চীনের সার্চ ইঞ্জিন বাইদু থেকে ভিন্নতর।

* ২০১২ সালে নিউজ অ্যাপের পাশাপাশি চীনের আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় অ্যাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি পায় বাইটড্যান্স। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি উইচ্যাটের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে নিয়ে আসে ‘ফ্লিপচ্যাট’ অ্যাপ এবং ‘ডুওসান’ নামে একটি ভিডিও মেসেজিং অ্যাপ।

* বাইটড্যান্স বর্তমানে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। এই সম্পদ প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। কোম্পানিটি বিশ্বের বড় বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ লাভ করেছে। যেমন: সফটব্যাংক, সিকোয়িয়া ক্যাপিটাল এবং জেনারেল আটলান্টিক।

* ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাইটড্যান্স চীনে চালু করে শর্ট-ভিডিও অ্যাপ ‘ডুয়িন’। ছোট আকারের ভিডিও তৈরির অ্যাপ চীনের বাজারে নতুন কিছু নয়। কিন্তু আকর্ষণীয় ফিচারের কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ডুয়িন। মাত্র এক বছরের মধ্যে অ্যাপটি দশ কোটি ব্যবহারকারী এবং প্রতিদিন একশ কোটি ভিডিও ভিউয়ের মাইলফলক অর্জন করে।

* এক বছর পরে, ডুয়িন অ্যাপটি চীনের বাইরে নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন নাম ‘টিকটক’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এবং এই ভিডিও প্ল্যাটফর্মটি থাইল্যান্ড, জাপান এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোয় শীর্ষ জনপ্রিয় অ্যাপের তালিকায় খুব দ্রুত চলে আসে।

* কিন্তু টিকটক যখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি অ্যাপ ‘মিউজিক্যাল ডট লি’ ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মিউজিক্যাল ডট লি (‘মিউজিক্যালি’ নামেও পরিচিত) অ্যাপে ঠোঁট মিলিয়ে ১৫ সেকেন্ডের মজার মিউজিক ভিডিও তৈরি করা যায়।

মিউজিক্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স ঝু

* মিউজিক্যালি অ্যাপটি ২০১৪ সালে তৈরি করেন অ্যালেক্স ঝু এবং লুইস ইয়াং। এটি মূলত ছোট আকারের শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঝু বলেন, ‘এই ভিডিওটি প্ল্যাটফর্মের প্রকৃত ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’ এটি মজার ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে।

* ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোডের অ্যাপ হিসেবে ১ নম্বর অবস্থানে জায়গা করে নেয় মিউজিক্যালি এবং এই শীর্ষ তালিকা থেকে অ্যাপটিকে আর টলানো যায়নি। জ্যাকব সার্টোরিয়াসের মতো নতুন প্রজন্মের অনেক সংগীত তারকার সৃষ্টি হয় মিউজিক্যালি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।  

* ছোট আকারের ভিডিও তৈরির আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাপ ‘ভাইন’। এতে ৬ সেকেন্ডর ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করা যায়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ‘ভাইন’ বন্ধ হয়ে যায়। ভাইন এর মাধ্যমে খ্যাতি পাওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক তরুণ তারকা তাদের মিউজিক প্রতিভা চালিয়ে নেয়ার জন্য চলে আসেন মিউজিক্যালি অ্যাপে।

* এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বী মিউজিক্যালি অ্যাপটিকে ১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় বাইটড্যান্স। চীনের এই কোম্পানিটি তাদের ছোট আকারের ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘মিউজিক্যালি’ এবং ‘টিকটক’- দুটি আলাদা আলাদা অ্যাপ হিসেবে পরিচালনা করতে থাকে।  

* এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ২০১৮ সালের আগস্টে বাইটড্যান্স এক ঘোষণায় জানায়, মিউজিক্যালি অ্যাপটি বন্ধ করে দেয়া হবে। এরপর অ্যাপটির কার্যক্রম টিকটকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। মিউজিক্যালি অ্যাপের সকল ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যায় টিকটক। মিউজিক্যালি এবং টিকটক অ্যাপ একত্রিত হয়ে ‘টিকটক’ নামে যাত্রা শুরু করে। এ প্রসঙ্গে মিউজিক্যালি অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স ঝু সেসময় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিউজিক্যালি এবং টিকটক একত্রিত হয়ে যাওয়ায় একটি অ্যাপেই উভয় ধরনের অভিজ্ঞতা উপভোগ করা সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে সবাই ভিডিও তৈরি করতে পারবে।’

* টিকটকের জনপ্রিয়তার কারণে বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারীর বর্তমানে আন্তর্জাতিক তারকাদের সমতুল্য খ্যাতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ লিন নাস এক্সের কথা বলা যেতে পারে। তার ‘ওল্ড টাউন রোড’ গানটি টিকটকের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, অগণিত ভিডিও এবং ‘মেমে’তে এটি ব্যবহৃত হয়।

জনপ্রিয় টিকটক তারকা লরেন গ্রে

* বর্তমানে টিকটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হচ্ছেন ১৭ বছর বয়সি লরেন গ্রে। প্রথমে তিনি মিউজিক্যালিতে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। বর্তমানে টিকটকে লরেন গ্রের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।

* টিকটক যেমন জনপ্রিয় তেমনি বিতর্কিত। অ্যাপটির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ও অপসংস্কৃতি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

Tags: