muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

বরগুনার দুই উপজেলায় ২৮ বছরেও হয়নি দেওয়ানী আদালত

আমতলীতে দেওয়ানী আদালত না থাকায় ২৮ বছর ধরে আমতলী-তালতলী উপজেলার কয়েক হাজার মামলা-মোকোদ্দমায় অর্ন্তভুক্ত বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

৪ কিলোমিটার প্রমত্তা পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে মামলা-মোকোদ্দমার জন্য যেতে হয় বরগুনা সদরে অবস্থিত সহকারী জজ আদালতে। এতে দারুনভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে জণস্বার্থ।

২০১২ বরগুনা জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে প্রতিবেদন দিলেও সাত বছরেও তা আলোরমুখ দেখেনি। এতে স্থাবির হয়ে পরে আদালত পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম। দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানাগেছে, ১৯৮২ সালে আমতলী-তালতলী নিয়ে আমতলী উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আমতলীতে মুনসেফ আদালত স্থাপিত হয়। ওই সময় থেকে খুব ভালো ভাবেই চলে আসছিল আমতলী আদালত।

১৯৯১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে কোনো কারণ ছাড়াই আমতলী আদালত প্রত্যাহার করে বরগুনা জেলা সদরের সাথে সংযুক্ত করে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হয় দুই উপজেলার কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী।

মুনসেফ আদালত বরগুনায় সংযুক্ত হওয়ায় এক বছরের মাথায় পায়রা নদী ও রাখাইন অধ্যুাসিত এলাকা বিবেচনা করে ফৌজদারী আদালত পুনরায় আমতলীতে শুরু হয়। কিন্তু গত ২৮ বছরেও দেওয়ানী আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

বন্যা-জলোচ্ছাস উপেক্ষা করে চার কিলোমিটার প্রমত্তা পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে দুই উপজেলার মানুষের বরগুনা জেলা সদরে সহকারী জজ আদালতে মামলা করতে যেতে হয়। এতে মামলা-মোকোদ্দমার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার বিচার প্রার্থীরা চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

বরগুনা জেলা সদরে দেওয়ানী আদালত থাকায় দু’উপজেলার জণস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে দাবি করেন আমতলী মানবধিকার কমিশনের সভাপতি অশোক মজুমদার।

দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের দাবিতে ইতিমধ্যে আমতলী উপজেলা আইনজীবি সমিতি আইন মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছেন। বর্তমানে বরগুনা দেওয়ানী আদালতে আমতলী-তালতলীর প্রায় ৩ হাজার মামলা চলমান রয়েছে।

এদিকে ২০১২ সালে তৎকালিন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম আমতলী আদালত পরিদর্শনে আসেন। তিনি আদালত পরিদর্শন করে বরগুনা জেলা জজকে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের মতামত চান। তৎকালিন জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে প্রতিবেদন দেন।

কিন্তু প্রতিবেদন দেয়ার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের আলোর মুখ দেখেনি। স্থাবির হয়ে পরে আদালত পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম। ভুক্তভোগীরা দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

তালতলী উপজেলা গাবতলী গ্রামের মোঃ আবদুল মাজেদ মাষ্টার বলেন, গত ৮ বছর ধরে বরগুনা সহকারী জজ আদালতে (আমতলী) একটি মামলা চলছে। ঝড় বন্যা উপেক্ষা করে চার কিলোমিটার পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বরগুনা আদালতে যেতে হয়। এটাযে কতটা কষ্টের তা বুঝাতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, আমতলী-তালতলী মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আইন মন্ত্রনালয়কে দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানী আদালত স্থাপনের দাবি জানাই।

আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আইনজীবি মোঃ মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, ১৯৯১ সালে আমতলী থেকে দেওয়ানী আদালত প্রত্যাহার করে বরগুনা জেলা সদরের সাথে সংযুক্ত করে। এতে ভোগান্তিতে পরেছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার মামলা মোকোদ্দমার সাথে সংযুক্ত বিচারপ্রার্থীরা। দ্রুত দেওয়ানী আদালত আমতলীতে পুনঃস্থাপনের দাবি জানাই।

বরগুনা আইনজীবি সমিতির আমতলী বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমতলীতে দেওয়ানী আদালত না থাকায় প্রায় ৩ হাজার মামলার বিচারপ্রার্থীদের বরগুনা আদালতে যেতে হচ্ছে। যা চরম দুর্ভোগের। দ্রুত দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের দাবী জানাই।

বরগুনা আইনজীবি সমিতির আমতলী বারের সাবেক সহ-সভাপতি সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. কাশেম মিয়া বলেন, ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আমতলী থেকে দেওয়ানী আদালতটি বরগুনা জেলা সদরের সাথে সংযুক্ত হয়। গত ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও দেওয়ানী আদালত আমতলীতে পুনঃস্থাপন হয়নি। এই ২৮ বছর ধরেই দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চরম কষ্টে মামলা পরিচালনা করছে।

বরগুনা আইনজীবি সমিতির আমতলী বারের সহ-সভাপতি এ্যাড. এম এ কাদের মিয়া বলেন, মানুষের কষ্ট বিবেচনা করেই আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করে আসছি। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে তৎকালিন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম আমতলী আদালত পরিদর্শন করে আদালত পুনঃস্থাপনের জন্য বরগুনা জেলা জজকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বরগুনা জেলা জজ আমতলীতে আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে মত দেন। জেলা জজের দেয়া প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হলেও গত ৭ বছরেও ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের কার্যক্রম স্থাবির হয়ে যায়।

বরগুনা আমতলী উপজেলার কৃর্তি সন্তান ঢাকা বার আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. গাজী শাহ আলম বলেন, আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপন সময়ের যুগোপযোগী দাবী। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ওইখানে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বন্যা জলোচ্ছাস উপেক্ষা করে পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে আমতলী ও তালতলীর মানুষ বরগুনা জেলা শহরে স্থাপিত আদালতে যেতে হয়। এটা অনেক কষ্টের। আইন মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমতলীতে দেওয়ানী আদালত পুনঃস্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি এবং যাতে দ্রুত আদালত স্থাপন হয় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Tags: