muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

ছোট ছোট গ্রুপে আবারো সুন্দরবনে ফিরছে দস্যুরা!

২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন।  সে সময় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের মধ‌্যে স্বস্তি নেমে আসে।  সুন্দরবন এলাকার বন ও জল দস‌্যুদের পুনর্বাসন করতে সে সময় জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়।

তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় আবারো দস‌্যুদের তৎপরতা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ৮ মাসে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৮ জন বনদস্যু নিহত হয়েছে। সে সময় দস‌্যুদের কাছ থেকে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বেশ কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। মাঝে-মধ্যেই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধে নিহত, গ্রেপ্তার ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪ দস্যু নিহত হয়।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ‘যারা আত্মসমর্পণ করেনি তারাই মূলত ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে বিচ্ছিন্নভাবে নতুন করে ছোট দল গড়ে তুলছেন।’

সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে- দস্যুরা কি আবারো বনে ফিরতে শুরু করেছে?

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিন স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দস্যুমুক্ত করার ঘোষণা দেন।

এ ঘোষণার পর কিছুদিন নির্ভয়ে সুন্দরবনে জীবিকা নির্বাহের কাজ করতে পেরেছেন বনজীবীরা। তবে এরই মধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি দস্যুবাহিনীর আবির্ভাব ঘটেছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও চাঁদপাই রেঞ্জে। ফের শুরু হয়েছে বনজীবীদের জিম্মি ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা। তবে র‌্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও নতুন এ সকল দস্যু বাহিনীর সন্ধানে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। 

র‌্যাবের সূত্র জানায়, দস্যুরা রাতের দিকে ডাকাতি করে তারপর সরু খালগুলোতে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে। মাছ ধরার মৌসুমে বা বনে যাওয়ার মৌসুমে তারা মূলত জেলেদের ওপরই হামলা করে।

আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালনকারী মংলা থানার চিলা ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী ও মহাজন মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, পরবর্তীতে তাদের আত্মীয়দের মধ‌্যে অনেকেই ওই পথে যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগ লোকই কর্মহীন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘সুন্দরবন অনেক বড় এলাকা। অনেক খালবিল। কিছু কিছু আছে খুবই সরু। সেখানে বনদস্যুদের পক্ষে লুকিয়ে থাকা অনেক সহজ। যখন রাত হয় ওরা বড় ট্রলার ব্যবহার করে। আর যখন দিন হয় তখন ছোট নৌকা ব্যবহার করে খালে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।’

সূত্র জানায়, সুন্দরবনে জেলেরাই বনদস্যুদের মূল শিকার। জেলেরা ভয়ে অনেক নৌকা নিয়ে একসাথে চলাচল করে থাকেন। সুন্দরবনের ভেতরে রাতের বেলায় নির্দিষ্ট এলাকায় থাকার চেষ্টা করেন। জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে বনদস‌্যুদের প্রতিহত করার চেষ্টাও চালান।

চাঁদপাই এলাকার জেলে বিদ্যুৎ মণ্ডল জানান, তাদের জন্য মূল সমস্যা হয় যখন বনদস্যুরা কাউকে জিম্মি করে। তিনি বলেন, ‘পাঁচটা লোক কোনো ট্রলারে থাকলে ওই ট্রলারের মালিককে নিয়ে যায় দস‌্যুরা।  তা না হলে মাঝিদের নিয়ে যায়। এরপর ওদের জিম্মি করে বাড়িতে ফোন দিতে বলে। ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চায়। তাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এ তথ্য এলাকায় আসার পর প্রশাসনকে জানানোর কোনো উপায় থাকে না। জেলেদের টার্গেট থাকে তখন ওই লোকটাকে কীভাবে ছাড়াবে। তারা জেলেদের মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। তারপর তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।’

আত্মসমর্পণকারী দস‌্যুদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভালো জীবনে যেতে গেলে একটু কষ্ট করে চলতে হয়। অনেকের হয়তো তা ভালো লাগে না। যেখানে অর্থের লোভ রয়েছে, সেটা ভালো লাগাই স্বাভাবিক। সরকার যেভাবে আমাদের সহায়তা করছে, তারপরেও যদি কেউ মনে করে ওই পেশাই ভালো, তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ’

র‌্যাব-৬’র স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মেজর শামীম সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও যারা সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছে তাদেরকে শক্তহাতে প্রতিহত করা হচ্ছে। নিয়মিত টহলের কারণে তারা সুন্দরবনে দস্যুতা করার দুঃসাহস রাখতে পারছে না। যারা নতুন করে সুন্দরবনকে অশান্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের কেউ ছাড় পাবে না। সকল বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন বনদস্যু-জলদস্যু সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এসে সময় তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেন।

Tags: