muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

৭ ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি, মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু

এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি। এভাবে কয়েকটি হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা মেলেনি। ভর্তি নেয়নি কোনো হাসপাতাল। অবশেষে শ্বাসকষ্টে বিনা চিকিৎসায় মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলো।

রোববার (১৯ জুলাই) দুপুরে নাটোর শহরের সদর থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্বাস আলী গাজী (৮০)। তিনি সদর উপজেলার আগদিঘা কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা।

মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আলী গাজীর ছেলে আজিম উদ্দিন গাজী অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর ধরে আমার বাবা আব্বাস আলী গাজী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শনিবার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে বাবাকে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমার বাবাকে ভর্তি নেননি। বাবা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলেও ভর্তি নেননি চিকিৎসকরা। পরে বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে ঘুরে শেষ পর্যন্ত সততা ক্লিনিকে নিয়ে এলে তারা বাবার বেশকিছু টেস্ট করান। টেস্ট করার পর তারা বাবাকে আবারও সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বাবাকে ভর্তি নেননি। আবারও বাবাকে সততা ক্লিনিকে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক দেখে কিছু ওষুধ লিখে দেন এবং বাবার আরেকটি পরীক্ষা করা হয়। পরে অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দেয়া অবস্থায় মারা যান বাবা।

এ বিষয়ে সততা ক্লিনিকের পরিচালক আব্দুল আওয়াল রাজা বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই রোগীকে আমাদের ক্লিনিকে আনা হয়। আমরা তাৎক্ষণিক অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দিয়ে রোগীকে নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আনিসুজ্জামানের অধীনে চিকিৎসা নিতে বলি। পরে রোগীকে নিয়ে স্বজনরা চলে যান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবার রোগীকে নিয়ে আসা হয়। তখন রোগীর অবস্থা খারাপ। চেষ্টা করেও রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে দুপুরে সততা ক্লিনিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আলী গাজীকে দেখতে যান নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ও সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান।

নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সোহেল বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি।

সদর হাসপাতালের আরেক আরএমও ডা. মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘আমি সিভিল সার্জন অফিসে ছিলাম সারাদিন। খোঁজ নিয়ে জেনেছি জরুরি বিভাগের ডা. কাজী রাসেলের কাছে অসুস্থ অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে নেয়া হয়। রাসেল দেখেছেন রোগীর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। এজন্য রোগীকে জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি না করে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি না করে রোগীকে নিয়ে যান।’

ডা. মঞ্জুর রহমান বলেন, করোনাকালীন সাধারণ রোগীদের কথা বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বজনরা তাকে সেখানে ভর্তি করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে নাটোর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. কাজী রাসেলের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি। তিনি মতামত জানালে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হবে।

নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কি-না তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। কোনো অবহেলা থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tags: