ভোট ছাড়া রাতের অন্ধকারের সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই শাহেদ-সাবরিনাদের উত্থান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সরকারের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আপনি দিনের ভোট রাতে নেবেন, তাহলে কি সমাজে শাহেদ-সাবরিনার উত্থান হবে না? ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা নেই, নির্বাচন কমিশন বলে দিল- সুষ্ঠু ভোট হয়েছে এবং ৪০%, ৪৫%, ৫০%, ৬০%, ৭০% ভোট কাস্ট হয়েছে। অথচ ভোট কেন্দ্রে ভোটার নেই, চতুষ্পদ জন্তু ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংবাদপত্র চাপের মধ্যেও, হুমকির মধ্যেও এগুলো প্রকাশ করেছে, এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও এগুলো প্রকাশ করেছে। তাহলে এই সমাজে শাহেদদের উত্থান হবে না কেন? যারা ভোট নিয়ে জালিয়াতি করে তারা মানুষের অসুস্থতা নিয়ে জালিয়াতি করবে না কেন?’
সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দল আয়োজিত ‘করোনাকালীন বাজেটে মৎসজীবী খাতকে উপেক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা’র প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ডানে বামে যা ঘটছে তার প্রতিবাদ না করলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জনগণের প্রতি দায়িত্ব আমরা পালন করছি না। একটি সরকার জনগণের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় থাকলে এ রকম শাহেদদের উত্থান হবে, সাবরিনার উত্থান হবে, সম্রাটের উত্থান হবে। আজকে এই জায়গাগুলোতে বেশি করে আলোচনা করতে হবে, কথা বলতে হবে। যে সরকারের মূলেই আছে অবৈধতা সেই সরকারের হাতে সমাজের কোথাও ভালো কিছু হবে- এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে তো নেই-ই এমনকি পৃথিবীর কোথাও নেই।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আজকে করোনা পরীক্ষা করার মানুষের সংখ্যা কমে গেছে কেন? আমরা তো হাতে গোনা দু-একটা হাসপাতালের কথা জানি, কিন্তু এরকম আরও যে কত হাসপাতালে মানুষের জীবন নিয়ে অনাচার চলছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। করোনা আক্রান্ত মানুষের যদি নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেয়া হয়, আর যার করোনা হয়নি তাকে যদি পজিটিভ সার্টিফিকেট দেয়া হয় তাহলে এ দেশ কীসের ওপর চলছে, আপনারাই বলুন। আজ নানাভাবে আতঙ্কিত মানুষ, তার ওপরে হাসপাতালে ভুয়া সার্টিফিকেট যদি দেয়া হয়- তাহলে কেন মানুষ হাসপাতালে যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য? মানুষ যাবে না। মানুষ যাবে না এজন্যই যে, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সংবাদপত্রের পাতায় বেরিয়েছে, গত দুদিন ধরে করোনা পরীক্ষা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। কারণ মানুষ চাচ্ছে না, করোনা না থাকলেও পজিটিভ সার্টিফিকেট নিতে। এই আতঙ্ক নিয়ে কেন হাসপাতালে যাবে মানুষ? কেন তার ভুয়া পরীক্ষা হবে? এ কারণে দিন দিন টেস্টের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আজকের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অনাচার, অবিচার, বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভয়ংকরভাবে দমনের মধ্য দিয়ে। আমরা দেখেছি, এই অনাচারগুলো এই বিশৃংখলাগুলো এই জাল জালিয়াতি, বাটপারি তৈরি হয়েছে সমাজে শাহেদদের মতো লোকদের উত্থানের কারণে।’
রিজভী বলেন, ‘আমার দেশের সীমানায় ঢুকে যদি অন্য দেশ মাছ ধরে নিয়ে যায় তাহলে আমার দেশের সার্বভৌমত্ব কোথায়? আমার মাছ আমি খেতে পারবো না, অন্য দেশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। আর সমাজের মধ্যে চোর, বাটপার এদের উত্থান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরণ ঘটাতে হলে অবশ্যই গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন ঘটতে হবে, অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আবারও রাজপথ উত্তাল করতে হবে। তাছাড়া কোনও নিরাপত্তা থাকবে না, কারো জীবনের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম মাহাতাবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংগঠনের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।