muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

প্রচ্ছদ

বক্তব্য প্রত্যাহারের ‘প্রশ্নই ওঠে না’ : প্রতিমন্ত্রী মুরাদ

বিরোধী দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করাসহ সাম্প্রতিক নানা সমালোচিত মন্তব্যের কারণে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মীরা। তবে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ জানান, তিনি এসব বক্তব্য দিয়ে কোনো ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের ওপর থেকে কোনো চাপও নেই।

সম্প্রতি একটি ইউটিউব ভিডিওতে তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ। পরে গত শনিবার একটি টিভি টক শোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এই দুটি ঘটনা নিয়ে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের দল, আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেই ফেসবুকে তার সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

গত শনিবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান অপর আলোচক, বিএনপির একজন নেত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আলোচনার একপর্যায়ে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ এবং তার ‘চিকিৎসা দরকার’ বলে মন্তব্য করেন। সেই সময় দুইজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়।

এর দুদিন আগে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে উদ্দেশ করে আপত্তিকর বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাকে। ইউটিউবের ওই টক শোতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মুখ ভীষণ খারাপ’। এসব বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে। এর আগেও নানা রকম বক্তব্যের জন্য আলোচনায় উঠে এসেছেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেছেন, তিনি বক্তব্য দেওয়ার আগে তাকে ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ করে কথা বলেছেন শীর্ষস্থানীয় ওই বিএনপি নেতার কন্যা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়সের চেয়ে সে এক বছরের বড়। আমার কন্যার মতো বয়সী হয়ে যে নোংরা ভাষায় আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে, সেটা তো কুচিন্তনীয়। এটা আমার কাছে খুব দুঃখজনক মনে হয়েছে। তার সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমের অনেক ছবি আমার কাছে চলে এসেছে।’

আর টক শোতে হাজির হয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আক্রমণ করে মন্তব্য করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ওই টক শোটা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কেন বলেছি। আমি একজন চিকিৎসক। সেই হিসেবে তার সম্পর্কে আমার যে অবজারভেশন, সেটা আমি বলেছি। সেটা ভুল হলে আমি দুঃখিত।’

তবে সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, মুরাদ হাসান যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতেন, তাহলে ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না।’

পেশায় চিকিৎসক মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোকে ভুল বলে স্বীকার করেন কি না কিংবা প্রত্যাহার করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না।’

তিনি বিবিসিকে আরও বলেন, তার বক্তব্য নিয়ে নানা রকম সমালোচনা হলেও তার ওপর দল বা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য প্রত্যাহারের কোনো চাপ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ এবং ৪০ নারী অধিকার কর্মী আলাদা বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সরকার দাবি করে যে তারা নারীবান্ধব। নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান রেখে কথা বলতে পারেন না, সেই ব্যক্তি তার পরও কী করে পদে বহাল থাকেন?’

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নারীপক্ষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি সমাবেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এর আগে এ রকম একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন আলোচককে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করে কারাগারে যেতে হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। তবে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের এসব বক্তব্যের বিষয়ে দল বা সরকারি তরফ থেকে প্রকাশ্যে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।

Tags: